প্লেনের ভাড়া তিনগুণ করেছে মোদীর সরকার, তাই আগেভাগে ফিরতে পারেনি ভারতীয় পড়ুয়ারা
কেন্দ্রীয় সরকার প্লেনের ভাড়া তিনগুণ করে দেওয়ায় ভারতীয় পড়ুয়ারা যুদ্ধের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইউক্রেন থেকে সময়মতো দেশে ফিরতে পারেননি। এমনই অভিযোগ করলেন কয়েকজন পড়ুয়ার অভিভাবকরা। ২৫ হাজার টাকার টিকিটের দাম বেড়ে হঠাৎ ৮০ হাজার টাকা হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার সময়মতো ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় পড়ুয়া ও অভিভাবক উভয়েই উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। ফলে যুদ্ধ ঘোষণার পর দেশে ফেরার প্লেনের টিকিট কাটতে গিয়ে পড়ুয়াদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। ৮০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পরও অনেকে টিকিট পাননি, এমন অভিযোগও উঠেছে। বিমানবন্দর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপাতত উড়ান চালু না থাকায় টিকিট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বিপদকালে একসঙ্গে হাজার হাজার টাকা খুইয়ে সমস্যায় পড়েছেন এরাজ্যের ডাক্তারি পড়ুয়ারা।
যুদ্ধ আক্রান্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পূর্ব মেদিনীপুরের অনেকেই ডাক্তারি পড়ছেন। এখন পর্যন্ত চারজনের পরিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন হলদিয়ার ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রী দীপাঞ্জলি বেরা। পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গিরিশ মোড় এলাকায় তাঁদের বাড়ি। তিনি মেডিকেলের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। ২০১৬ সালে পূর্ব ইউক্রেনের লুগানস্ক স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। পরে তিনি চলে আসেন কিয়েভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে। আগামী মে মাসেই ডাক্তারি পড়া শেষ করে তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল। শুক্রবার দুপুরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ভিডিও কলে দীপাঞ্জলি জানান, তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সারারাত ধরে গোলাগুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শব্দে ঘুম আসেনি। যুদ্ধের সময় তাঁরা বাঙ্কারের মধ্যে ছিলেন।
কিয়েভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির কাছেই একটি ফ্ল্যাটে কয়েকজন বন্ধু মিলে রয়েছেন দীপাঞ্জলি। তাঁর সঙ্গী বেলদার অনিন্দিতা। তিনি এদিন ফোনে জানিয়েছেন, কিয়েভের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এখন আর দু’দেশের সেনাদের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে না। সাধারণ নাগরিকদের ঘরবাড়িতেও বোমা ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘জল নেই। খাবার নেই। বাইরে বেরোতেই পারছি না। এখানকার ভারতীয় দূতাবাসের তরফে পইপই করে বলে দেওয়া হয়েছে, যেমন আছেন তেমনই থাকুন।’ অনিন্দিতাদের দেশে ফেরার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরে আসতে ক্যাব চাইছে দু’ হাজার মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় তা প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। অনিন্দিতা বলছিলেন, ‘আমাদের এখন যা অবস্থা, এত পরিমাণ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।’ ফলে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন দীপাঞ্জলি-অনিন্দিতারা।
সোনারপুরের সম্রাট মল্লিক সহ আরও ছ’জনেরও ঠাঁই ওই একই জায়গায়। এঁদের কারও বাড়ি কেশপুর, কারও মেদিনীপুর। আপাতত দীপাঞ্জলিদের ফ্ল্যাটই হয়ে উঠেছে একঝাঁক বাঙালি ডাক্তারি পড়ুয়ার কন্ট্রোল রুম। তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে মিনিট দশেক দূরে একটি গাড়ি পার্কিং লটে তৈরি হয়েছে বাঙ্কার। সেখানে হাজার খানেক বাসিন্দার সঙ্গে এরাজ্যের বহু পড়ুয়ার ঠাঁই হয়েছে। সাইরেনের শব্দ পেলেই তাঁরা বন্ধুরা মিলে পড়িমড়ি করে ছুটছেন বাঙ্কারে। বম্বিং শেষ হলে আবার ফিরছেন ফ্ল্যাটে। দীপাঞ্জলি জানান, কিয়েভের তাপমাত্রা মাইনাস ১৬ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়ায় বাঙ্কারে বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না। তিনটে মোটা কম্বলেও শীত কাটছে না। সেজন্য মাঝে মাঝে ফ্ল্যাটে এসে রুম হিটারে উত্তাপ নিচ্ছেন সকলে। দুপুরে সকলে মিলে নুন-ভাত ও ডিমভাজা খেয়েছেন। কিন্তু দোকানপাট সব বন্ধ থাকায় কিছু খাবারও মিলছে না। সঙ্গে পানীয় জলের তীব্র হাহাকার।
দীপাঞ্জলির দাদা দীপসাগর বলেন, বোনকে খাবার কেনার জন্য গতকাল ৮ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এটিএম সব বন্ধ থাকায় টাকাও পাচ্ছে না। কয়েকদিনের মধ্যে খাবারের সঙ্কট শুরু হবে। ওদের ফিরে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু প্লেন ভাড়া অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যাওয়ায় কেউ ঝুঁকি নেয়নি। দীপাঞ্জলির পরিবারের আর্জি, কেন্দ্র সরকার প্লেন ভাড়া কমালে ইউক্রেনের পড়ুয়াদের দেশে ফিরতে সুবিধে হয়। বহু সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়ে স্রেফ এত টাকা ভাড়ার জন্য যুদ্ধের কথা শুনেও দেশে ফিরতে পারেননি।