অতিমারির আতঙ্ক কাটিয়ে ফের চেনা ছন্দে ফিরছে বইপাড়া
বাংলা তথা বিশ্ব পেরিয়ে এসেছে অতিমারি, দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে থমকে ছিল স্বাভাবিক জীবন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের সদর্থক ভূমিকায় ফের শুরু হয়েছে শ্রেণীকক্ষের পঠনপাঠান। ক্যাম্পাস খুলে গিয়েছে। আর ক্যাম্পস খুলতেই প্রাণ ফিরছে বইপাড়ায়।
প্রসঙ্গত বইপাড়া হল বাংলার নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র, ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বই বাজার। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত এই বইপাড়া ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক মিশেল। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় থমকে গিয়েছিল বইপাড়া। তারপর ২০২০ সালের মে-তে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্পানে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় বাঙালির ঐতিহ্যের বইপাড়া।
কিন্তু ফের শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসের পঠনপাঠন, জেগে উঠছে কলেজ স্ট্রিট চত্বর। বইপাড়ার জনৈক এক বই বিক্রেতা সুনীল দাসের কথায়, ‘অতিমারি সময় যখন দিনে ৮০০ টাকা আয় করতেই কালঘাম ছুটে যেত, এখন সেখানে প্রতিদিনই ২০০০ টাকার উপরে আয় হচ্ছে। বিগত দু’বছরে এই প্রথম বিক্রি ২০০০ টাকার উপরে পৌঁছাচ্ছে। সামনেই স্কুল কলেজের পরীক্ষা ফলে বিভিন্ন রকম বইয়ের চাহিদাও রয়েছে।’
বই বিক্রেতাদের অধিকাংশেরই মত, বই বিক্রি আবার অতিমারি আসার আগের মতোই হচ্ছে। শ্রী আশুতোষ বুক সেলার’স-এর সেক্রেটারি প্রতাপ দাসের কথায়, “পাঠ্যবই, সহায়িকা এবং সমাধান মূলক বইগুলোর চাহিদা রয়েছে। করোনার আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে।” আগামী শিক্ষাবর্ষে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী বই বিক্রেতারা। পাঠ্য বই বিক্রেতা বিপিন সাপুই বলেন, “সব জায়াগায় এখনও বাচ্চাদের ক্লাস শুরু হয়নি, কিন্তু পরের শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেই নতুন বইয়ের প্রয়োজন হবে। মার্চ থেকে বইয়ের চাহিদা আরও বাড়বে।”
অতিমারির পরে বইপাড়াকে ছন্দে ফেরাতে বিভিন্ন সদর্থক উদ্যোগ নেয় সরকার। বিগত বছর জুলাইতে প্রায় ৯০০ জন বই বিক্রেতাকে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে করোনা টিকাকরণ করা হয়, যার নেপথ্যে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের পরেও প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীরাসহ বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে বইপাড়ার দোকানগুলিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। অতিমারির আতঙ্ক কাটিয়ে ফের চেনা বইপাড়া চেনা ছবি চোখে পড়ছে।