ক্যাবের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়ার ফাঁদ থেকে উদ্ধারে উদ্যোগী রাজ্য সরকার
অ্যাপ ক্যাব গাড়ির পরিষেবা নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ। তাই যাত্রী হয়রানি রুখতে এবার কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এখন থেকে পরিবহণ দপ্তরের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসতে চলেছে ওলা, উবের মতো অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি। সেই লক্ষ্যে যাত্রীবান্ধব সরকারি বিধি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা অনুমোদন করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহেই অভিনব এই নির্দেশনামা জারি করবে পরিবহণ দপ্তর।
নয়া বিধি অনুসারে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি ইচ্ছামতো ভাড়া ঠিক করতে পারবে না। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বাস, ট্যাক্সি-সহ গণপরিবহণের মতো অ্যাপ ক্যাবেও ভাড়ায় রাশ হাতে রাখবে নবান্ন। যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়া ড্রাইভার ট্রিপ ক্যানসেল করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে যাত্রীকে টাকা দিতে হবে সংস্থাকে। একই সঙ্গে ক্যাব ড্রাইভারদের আরও বেশি আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য। সেই লক্ষ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আইনি সংস্থান থাকছে নয়া বিধিতে। সব মিলিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি বুক করে তিক্ত অভিজ্ঞতার রোজনামচা ভুলতে চলেছে বঙ্গবাসী। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।
এই মুহূর্তে অ্যাপ ক্যাব গাড়িগুলি শহর-শহরতলির গণ্ডি পেরিয়ে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায়ই পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ছে বিভিন্ন পর্যায়ে। গোটা বিষয়ে সাযুজ্য আনতে অভিন্ন নীতি কার্যকর করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দপ্তর। যাত্রীদের মূল অভিযোগ, অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি সার্জ চার্জের নামে কার্যত টাকা লুট করছে। বর্তমানে পরিবহণ দপ্তরের এ নিয়ে বিশেষ পদক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু নয়া বিধি অনুসারে অভিযুক্ত সংস্থার কাছে লাগামছাড়া ভাড়া আদায় নিয়ে কৈফিয়ত তলব করতে পারবে পরিবহণ দপ্তর।
সন্তোষজনক জবাব না মিললে ওলা, উবেরকে শো-কজ করা হবে। তাতেও কাজ না-হলে ওই সংস্থার লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পরিবহণ দপ্তরকে। কীভাবে নির্ধারিত হয় অ্যপ ক্যাবের ভাড়া? এই গাড়ির বেস ফেয়ার অর্থাৎ উঠলেই ৪৫ টাকা দিতে হবে। তারপর প্রতি কিমিতে ১০ টাকা করে ভাড়া গুনতে হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হবে ‘রাইট টাইম চার্জ’। অর্থাৎ গোটা যাত্রা পথের সময়। যাত্রী গাড়িতে ওঠা থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যত সময় লাগবে, তার উপর নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে হবে। এক্ষেত্রে দেড় টাকা প্রতি মিনিটে গুনতে হয় যাত্রীদের। সবশেষে যুক্ত হয় সার্জ চার্জ। এই চার্জ মূলত নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট এলাকায় গাড়ি বুকিংয়ে যাত্রীদের চাহিদার উপর নির্ভর করে। এই সার্জ চার্জ এতদিন মোট ভাড়ার দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত হয়ে যেত। কখনও কখনও সুযোগ বুঝে সেই সীমাও পেরিয়ে যেত। নয়া বিধি অনুসারে সার্জ চার্জের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এসি মিটার ট্যাক্সির মোট ভাড়ার ৫০ শতাংশ এই চার্জ বাবদ নিতে পারবে সংস্থাগুলি। সেক্ষেত্রে বর্তমানের তুলনায় অ্যাপ ক্যাবের ‘বাড়তি ভাড়া’ কমতে পারে। পাশাপাশি ড্রাইভারদের সুরক্ষায় ১০ লক্ষ টাকার জীবন বিমা ও ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার সুযোগ দিতে হবে ক্যাব সংস্থাকে। একই সঙ্গে ড্রাইভারদের দু’বছরের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা, চোখ ও শারীরিক সুস্থাতার প্রমাণ দিতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যাত্রীদের পুলিস ভেরিফিকেশন আবশ্যক করা হবে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, সরকারি নিয়ন্ত্রণ এলে আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়া যাবে। চালকদের পেশাগত সুরক্ষা দিলে গোটা পরিষেবা আরও মসৃণ হবে।