পুরভোটের ফলে বাংলা জুড়ে অস্তিত্ব সংকটে বিজেপি, তাসেরঘরের মতো ভেঙে পড়ল বিজেপি নেতাদের গড়
১০৮টি পুরসভার নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই শুরু হয় সবুজ ঝড়, সর্বত্র তৃণমূলের জয়জয়াকার। ঘাস ফুলের দাপটে বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে পদ্মের অস্তিত্ব রক্ষা এখন দায়। ২০২১-এর বিধানসভার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি নির্বাচনে রাজ্যে কমছে বিজেপির ভোট। কমতে কমতে রীতিমতো তলানিতে ঠেকেছে গেরুয়া শিবিরের ভোটব্যাঙ্ক। বঙ্গ বিজেপির প্রথমসারির নেতাদের পুরসভাগুলিতেও দাপট দেখিয়েছে তৃণমূল, পদ্ম নেতাদের তথাকথিত গড় বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই বাংলায়।
সবুজ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীদের গড় কাঁথি পুরসভা। কাঁথির অধিকারীগড়ে কাঁথি উত্তরের বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহ তৃণমূলের রিনা দাসের কাছে পরাজিত হয়েছেন। কাঁথি পুরসভার ২১ আসনের মধ্যে ১৭ টি আসন জিতে কাঁথি পুরসভা নিজেদের দখলেই রাখল তৃণমূল। অন্যদিকে কাঁথিতে অধিকারীগড়ের পতন হতেই সরব হল বিজেপির একাংশ, ইতিমধ্যে বিজেপির একাংশের তরফে টুইটার জুড়ে সেভ বেঙ্গল বিজেপি প্রচার চালানো হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। তাদের সাফ কথা, বাংলায় বিজেপির অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে শুভেন্দুকে তাড়াতে হবে।
অন্যদিকে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের গড় ব্যারাকপুর লোকসভা জুড়ে সবকটি পুরসভায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে পদ্ম। নিজের এলাকা ভাটপাড়াও রক্ষা করতে পারলেন না বিজেপি সাংসদ। ভাটপাড়া পুরসভার ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪ টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। প্রসঙ্গত, একটি ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। বিজেপির আরেক নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও নিজের এলাকা রক্ষা করতে ব্যর্থ। খড়্গপুর পুরসভার ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ড জিতে খড়্গপুর পুরসভার দখল নিলো তৃণমূল। একই অবস্থা বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পুরসভাতেও, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বালুরঘাট পুরসভার দখল নিল জোড়াফুল শিবির।
গড় রক্ষার প্রশ্নে বিজেপির অন্য দুই সাংসদ নিশীথ প্রামানিক এবং রাজু বিস্তও মুখথুবড়ে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ কোচবিহার পুরসভা রক্ষা করতে পারলেন না। কোচবিহার পুরসভার দখল নিল রাজ্যের শাসক শিবির। যেকোন নির্বাচন হোক; বিজেপি বরবার পাহাড়ে দাপট দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার সেই এখানেও বিজেপিকে ফিরতে হল শূন্য হাতে। দাজিলিং পুরসভা থেকে কার্যত মুছে গেল বিজেপি। উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য বানানোর দাবি করা সাংসদ রাজু বিস্তকে উত্তরের মানুষ ফেরালেন শূন্য হাতে।
বঙ্গে আর বিজেপি নেতাদের তথাকথিত গড় বলে কিছুই রইল না। রাজ্যস্তরের বিজেপি নেতারা নিজেদের পুরসভা, ওয়ার্ড এমনকি নিজেদের বুথ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারলেন না। অন্যদিকে দুর্বল ও ক্ষীণ হলেও দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে আসছে বামেরা। একুশের বিধানসভা নির্বাচন থেকে বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছিলেন, আজ বিজেপি নিশ্চিহ্ন হতেই; সে বৃত্ত সমাপ্ত হল।