বাড়ি ফিরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ইউক্রেন ফেরত অনীক-পুষ্পিতা
যুদ্ধের গল্প অনেক শুনেছে তাঁরা। কিন্তু জন্ম ইস্তক দেখেনি যুদ্ধ কী বস্তু। পড়াশোনা করতে গিয়ে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ আঁচ গায়ে লেগেছে তাঁদের। ঘরে ফিরলেও সেই ঘোর কাটছে না। কারও আতঙ্কে কথা সরছে না মুখে। কেউ আবার রাতে ঘুমের মধ্যেও শুনছেন বোমারু বিমানের আওয়াজ। সদ্য ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরেছেন ব্যান্ডেলের পুষ্পিতা চৌধুরী ও অনীক ঘোষ। এর মধ্যে অনীকের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। যুদ্ধকে সামনে থেকে দেখেছেন। এমনকী, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীচেই তৈরি হয়েছিল ইউক্রেনের সেনাঘাঁটি। অন্যদিকে, মুখে মুখে যুদ্ধের কথা শুনলেও তা প্রত্যক্ষ করতে পারেননি পুষ্পিতা। যখন তিনি ইউক্রেন ছাড়েন, তখন কিয়েভ থেকে প্রায় দেড় হাজার কিমি দূরের উঝওর্ড শহরের বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়ায়নি। দুই বঙ্গসন্তানই নিজের শহরে ফিরে যেমন স্বস্তি পেয়েছেন, তেমনই নিশ্চিন্ত হয়েছেন তাঁদের অভিভাবকরা।
বৃহস্পতিবার ব্যান্ডেলের কৈলাসনগরের বাড়িতে বসে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন অনীক। তাঁর কথায়, এক বুক আতঙ্ক নিয়েই আমরা ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে। আকাশে বারবার হানা দিয়ে যাচ্ছে রুশ বোমারু বিমান। নাগাড়ে বাজছে সাইরেন। ততদিনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নীচে সেনাছাউনি তৈরি করে ফেলেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। সে এক দমবন্ধ পরিবেশ। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। যুদ্ধক্ষেত্রের সেই অভিজ্ঞতা এখনও ঘুমতে দেয় না রাতে। অনীক বলেন, আমরা কোনওভাবে হাঙ্গেরিতে গিয়ে পৌঁছয়ই। তারপর বিমানে বুদাপেস্ট হয়ে দিল্লিতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাড়িতে ফিরেছি ১ মার্চ। অনীকের বাবা অজিত ঘোষ বলেন, ভয়াবহ উদ্বেগে দিন কেটেছে আমাদের।
অনীকের মতোই গত বছর ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছিলেন ব্যান্ডেলের নিউ কাজিডাঙার বাসিন্দা পুষ্পিতা চৌধুরী। বাবা রেলকর্মী শ্যামলশ্যাম চৌধুরী। মেয়ের জেদের জন্যই তাঁকে ইউক্রেন পাঠিয়েছিলেন শ্যামলবাবু। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হতেই বাড়িতে নেমে আসে আতঙ্ক। তবে মেয়ের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ প্রথম দিকে ছিল। ফ্রেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেন যখন পুরোদস্তুর যুদ্ধক্ষেত্র, তখনও কিছুটা নিরাপদ ছিল ওঝওর্ড শহর। কিয়েভ থেকে অনেকটাই দূরে সেই শহরে বসে যুদ্ধের আঁচ তেমন পাননি পুষ্পিতা। যদিও ফেরার পথে বুঝতে পেরেছেন কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সেখানে। ‘সেসব ভাবলেই গা শিউরে ওঠে’। বৃহস্পতিবার মায়ের কোল ঘেঁষে বসে বলছিলেন চৌধুরী বাড়ির ছোট মেয়ে। পুষ্পিতা বলেন, ফেরার পথে সহযাত্রীদের অভিজ্ঞতা থেকেও বুঝেছি, কী ঘটছে কিভে। এখন বাড়িতে বসে ইন্টারনেটে ছবি দেখে নিজের চেনা শহরকে মেলাতে পারছেন না এই তরুণী। বলছেন, কি অসহায় অবস্থা!
অনীক বা পুষ্পিতা বাড়ি ফিরলেও এখনও ফিরতে পারেননি হিন্দমোটরের দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বাবা দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, এদিনই ও ইউক্রেনের টার্নেল থেকে ঘুরপথে দিল্লিতে এসে পৌঁছেছে। এখন রয়েছে গাজিয়াবাদে। দু’-একদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে বলে জানিয়েছে।