উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ইউক্রেন থেকে দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ারে ফিরলেন ৫ ডাক্তারি পড়ুয়া

March 4, 2022 | 2 min read

চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। অবশেষে বৃহস্পতিবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরলেন দার্জিলিং জেলার চারজন ও আলিপুরদুয়ার জেলার এক ডাক্তারি পড়ুয়া। সন্তান ঘরে ফেরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন পরিবারের সদস্যরা। এঁদের মধ্যে একজন দার্জিলিং পাহাড়ের ভুটিয়াবস্তির বাসিন্দা কেলসঙ্গ গ্যাটসো ভুটিয়া। তিনি লভিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ফাঁসিদেওয়ার জয়ন্তিকা চা বাগানের বাসিন্দা অলোক মিশ্র। তিনিও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাগডোগরা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনই ইউক্রেন থেকে ডাক্তারি পড়ুয়া বাগডোগরার রুবিকা দত্ত, তাগদার লক্ষ্মী তামাং এবং আলিপুরদুয়ারের গৌরব কুমার ফিরেছেন।

এলাকায় পা রেখেই তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একসময় মনে হয়েছিল দেশে আর ফেরা হবে না। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে জন্মভূমিতে ফিরতে পেরে আনন্দে আত্মাহারা ওরা। ভুটিয়াবস্তির বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়ি ধরার আগে বাগডোগরা বিমানবন্দরের পার্কিংজোনে দাঁড়িয়ে কেলসঙ্গ গ্যাটসো ভুটিয়া বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশ করা পর্যন্ত পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ ছিল। ২৫ তারিখ হস্টেল থেকে বেরিয়ে প্রায় ৪০ কিমি ট্যাক্সি করে যাই। পরে ট্যাক্সিচালক জানান ৩-৪ কিমি হেঁটে গেলেই পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে যাব। সেই মতো বিকেল সাড়ে ৪টেয় হাঁটা শুরু করি। কনকনে শীতে প্রায় ৪০ কিমি হেঁটে অবশেষে রাত ২টোয় সীমান্তে পৌঁছই। তখন সীমান্তে বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ। ট্রানজিট ভিসা পেতে রীতিমতো লড়াই চলে। একসময় ভেবেছি, হয়তো আর বাড়ি ফিরতে পারব না। সীমান্তে দোকান ছিল না। লাগেজে থাকা শুকনো খাবার খেয়ে কোনওভাবে কাটিয়েছি। একটানা হেঁটে দু’টো পা জখম হয়েছে। ভিসা নিতে ধাক্কাধাক্কিতে বন্ধুদের এক এক করে হারিয়ে ফেলি। খুব ভয় হচ্ছিল। পোল্যান্ডে পৌঁছে স্বস্তি মেলে। অবশেষে বাড়ি ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। ফাঁসিদেওয়ার ছাত্র আলোক মিশ্র বলেন, গ্রেনেড হামলা থেকে বাঁচতে বেসমেন্টে পৌঁছনোর জন্য হস্টেল কর্তৃপক্ষ আমাদের একাধিকবার মহড়া করিয়েছে। তাই হামলার আগে সাইরেনের শব্দ শুনলেই বেসমেন্টে আশ্রয় নিতাম। সেই বিভীষিকা স্মৃতি থেকে কখনও মুছবে না। পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে ভিসার জন্য চারদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। কারণ, বিভিন্ন দেশের পড়ুয়া সহ ইউক্রেনের নাগরিকরা তখন দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিই। কিছুটা ট্যাক্সিতে যাই। বাকি প্রায় ৩০ কিমি রাস্তা হেঁটে সীমান্তে পৌঁছই। সীমান্তে ইউক্রেনের সেনারা সহযোগিতা করছিল না। আকাশের নীচে থাকতে হয়েছে। এখনও প্রচুর ভারতীয় সেখানে আটকে রয়েছেন। অলোকের বাবা আর বি মিশ্র বলেন, ছেলে ঘরে ফিরে আসায় খুবই ভালো লাগছে। আক্ষরিক অর্থে ছেলে ‘যুদ্ধজয়’ করে নতুন জীবন নিয়ে ফিরে এসেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#russia, #medical students, #ukraine, #Darjeeling, #alipurduar

আরো দেখুন