গরম উপেক্ষা করেই বইমেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমাচ্ছেন বই প্রেমীরা
শীতের পড়ন্ত বিকেলে যে রোদ্দুর মিঠে লাগত, ভরা বসন্তে তা যেন অসহ্য! গরম সেই অর্থে এখনও না পড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে চলছে বইমেলা। করোনা মহামারী এলোমেলো করে দিয়েছে অনেক কিছুই। গত দু’বছরে একটা বড় সময় কেটে গিয়েছে স্রেফ ঘরবন্দি হয়ে। মতের বিনিময় হোক বা কোনও বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা— প্রায় সবক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে প্রত্যেকে। তারপরও বইমেলা মানে বুদ্ধিবৃত্তিতে এগিয়ে থাকা বাঙালির প্রাণের উৎসব। এটুকু গরমের জন্য কি তা থেকে দূরে থাকা যায়? তাই কপালের ঘাম মুছতে মুছতেই চলছে কেনাকাটা। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষই গরমে জেরবার। তবুও ভরপুর উৎসাহে সেই অস্বস্তি উড়িয়ে দিতে চাইছে তারা।
সাধারণত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই হয় বইমেলা। এবার করোনা পরিস্থিতির জেরে তা প্রায় এক মাস পিছিয়ে গিয়েছে। যাই-যাই শীতবেলায় বইমেলার উঠোন আর মার্চের শুরুতে মেলাপ্রাঙ্গণের মধ্যে অনেকটাই ফারাক। গরমের জন্য মেলায় এবার মানুষজন কিছু কম বলে মনে করছেন প্রকাশক থেকে সাধারণ বিক্রেতারা। লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের পাশে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে দীপাংশু। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে সামনের দিকে পা বাড়াতেই তাঁর সঙ্গে দেখা বসিরহাটের সৌগতর। হাতে হাত রেখে সৌগতর প্রশ্ন, ‘বন্ধু, কী খবর বল…’। তারপর দু’জনে মজে যায় খোশগল্পে। প্রায় দু’বছর পর আবারও বইমেলায় আসতে পেরে তাঁরা উচ্ছ্বসিত। সৌগতর কথায়, বইমেলায় এমন অনেকের সঙ্গে আচমকা দেখা হয়ে যায়, যাঁদের সঙ্গে সেই কলেজের পর আর দেখা বা কথা হয়নি। দীপাংশুকে দেখিয়ে সে বলে, ওর সঙ্গেও আমার সেভাবেই দেখা হয়ে গেল আজ। গরমের মধ্যে বইমেলার অনুভূতি কেমন? তাঁদের কথায়, বইমেলা না হওয়ার চেয়ে একটু দেরিতে হওয়া অবশ্যই ভালো। প্রায় দু’বছর পর কত মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কত বই উল্টেপাল্টে দেখা যাচ্ছে। এ সুযোগ তো আর অন্য সময় মেলে না। ভার্চুয়াল বিশ্বে তো সম্ভবই নয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দেখা গেল, বাংলাদেশ স্টলের সামনে তরুণ-তরুণীরা সেলফি তুলতে ভিড় জমিয়েছেন। ‘জাগো বাংলা’র স্টলে জমাট জমায়েত মেতে রয়েছে বাউল গানে। রসনাতৃপ্তির জন্য মেলাজুড়ে ছড়ানো নানা খাবারদাবারের দোকান। গরমের জন্যই সন্ধ্যার দিকে মেলায় ভিড় বেশি হচ্ছে বলে জানালেন নামকরা প্রকাশনা সংস্থার এক প্রবীণ কর্মী।