মাতৃত্ব এবং ক্রিকেট একসাথে সামলাচ্ছেন কী করে? জানালেন পাক অধিনায়ক বিসমা
মহিলা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে অনায়াসেই হারিয়েছে ভারত। তবে ম্যাচের পর আলোচনার কেন্দ্রে চলে এল আর একজন, যার সঙ্গে ম্যাচের কোনও রকম সম্পর্ক নেই। এমনকী, ক্রিকেট যে কী, সেটা বোঝার বয়সই হয়নি তার। সে ফতিমা, পাকিস্তানের অধিনায়ক বিসমা মারুফের মেয়ে। রবিবার ম্যাচের পর সেই ফতিমার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভারতীয় দল, যে ছবি এবং ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত বছর অগস্টে মা হয়েছেন বিসমা। এর পর দলেও ফিরেছেন। বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু মাতৃত্বের কারণে এক সময় খেলা ছাড়ার কথাও ভাবতে হয়েছিল বিসমাকে। মা হওয়ার খবর যে দিন পেলেন, ভেবেছিলেন তাঁর ক্রিকেটজীবন হয়তো শেষ। পাকিস্তানের মতো দেশে মাতৃত্বের পর খেলায় ফিরে আসার ঘটনা খুবই কম। কিন্তু বিসমা হারতে চাননি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে ফিরে এসেছেন। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করেছে বোর্ডও। ফলে বিশ্বকাপের ম্যাচে গ্যালারিতে মেয়ের সঙ্গে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকী, মেয়েকে কোলে করে টিম বাস থেকে তাঁর নামার ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
১৯৯১ সালের ১৮ জুলাই লাহৌরে এক কাশ্মীরী পরিবারে জন্ম বিসমার। বাড়ির লোক কখনওই ক্রিকেট খেলায় মত দেননি। তাঁরা চেয়েছিলেন, মেয়ে পড়াশুনো করে ডাক্তার হোক। কিন্তু স্কুলজীবনের শেষের দিক থেকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে বিসমার। সেই আগ্রহ এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, লাহৌর কলেজ অব উওমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ক্রিকেট খেলার জন্য পড়াশুনো ছেড়ে দেন। ডাক্তার হওয়ার পর্ব সেখানেই শেষ।
তবে ক্রিকেট তাঁকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৯ মহিলা বিশ্বকাপের প্রথম বার পাকিস্তান দলে ডাক পান। পরের বছর এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী পাকিস্তান দলের সদস্য ছিলেন তিনি। সে সময় তাঁকে সহ-অধিনায়কও করা হয়। ২০১৭ সালে পাকিস্তান দলকে প্রথম বার নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই শ্রীলঙ্কাকে তিন ম্যাচের এক দিনের সিরিজে চুনকাম করে পাকিস্তান। পরের বছর মহিলাদের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ২০২০-তে মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নেতা ছিলেন তিনি। কিন্তু একটি ম্যাচে বুড়ো আঙুল ভেঙে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান। পাকিস্তানের দ্রুততম মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে এক দিনের ১০০০ রান করেছেন তিনি।
২০২১-এর অগস্টে তিনি মা হন। তবে এপ্রিলেই মাতৃত্বের খবর জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। দলের কোচ ডেভিড হেম্প এবং বোর্ডের সহযোগিতায় ফের ক্রিকেটে ফেরেন। বোর্ড একটি নীতি চালু করে, যেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটাররা এক বছর বেতন পাবেন এবং পরের বছর চুক্তিও পুনর্নবীকরণ করা হবে। এতেই অনুপ্রাণিত হয়ে ক্রিকেটে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বিসমা। বলেছেন, “বোর্ড এ ভাবে পাশে না দাঁড়ালে হয়তো ক্রিকেট ছাড়তে হত আমায়। এখন আমি মা-কে সব সময় সঙ্গে রাখি। জানি মেয়ে নিরাপদে রয়েছে।”
কিন্তু ক্রিকেট এবং মাতৃত্ব এক সঙ্গে সামলানো যে সহজ নয়, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন। ভারত ম্যাচের আগেই এক ওয়েবসাইটে বলেছিলেন, “এক জন সন্তানের মাকে দরকার হয়। আমি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গেলে সন্তানকে দেখবে কে? আমি মাঠে থাকার সময় কে ওর খেয়াল রাখবে? কোনও পরিচারক রাখলে তাঁকে নিয়ে সব সময় সঙ্গে ঘোরা খুব খরচের ব্যাপার। পাকিস্তানের মহিলা ক্রিকেটাররা এখনও সে রকম বেতন পায় না। কিন্তু বোর্ডের নীতি না থাকলে আমি এ কাজ করতে পারতাম না। এখন সন্তান দলের সঙ্গে থাকলে মনটাও ফুরফুরে থাকে। গোটা দলও উজ্জীবিত থাকে ওকে দেখলে। সব চিন্তা দূরে চলে যায়।”
বিসমার সাহসে মুগ্ধ ভারতীয় দল। স্মৃতি মন্ধানা যেমন নিজের ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “মা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসা এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা। গোটা বিশ্বের সমস্ত মহিলা ক্রীড়াবিদদের জন্যেই বিসমা মারুফ এক অনুপ্রেরণা। ফতিমার জন্য ভারত থেকে অনেক ভালবাসা। আশা করি এক দিন মায়ের মতো তুমিও ব্যাট হাতে তুলে নেবে।’