খেলা বিভাগে ফিরে যান

অধরা আইএসএল-এর লিগ-শিল্ড, জামশেদপুরের কাছে ০-১এ হার মোহনবাগানের

March 7, 2022 | 3 min read

এক বঙ্গসন্তানের গোলই কেড়ে নিল এটিকে মোহনবাগানের স্বপ্ন। গত বছরের মতো এবারও আই এস এল-এর লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়া হল না। গত বছর তাদের বাড়া ভাতে ছাই দেয়েছিল মুম্বই সিটি এফ সি। এবার অবশ্য জামশেদপুর তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিল বটে, কিন্তু ইস্পাত নগরীর ফুটবল দল অনেক আগে থেকেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল। টানা সাতটা ম্যাচ জিতে তারা শিল্ডটা জিতে নিল। ম্যাচের শেষে জামশেদপুরের ফুটবলারদের হাতে শিল্ডটা তুলে দেওয়ার পর তারা যেভাবে আনন্দে মাতল তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার, বিশে মার্চের ফাইনালে যদি তারা নাও নাও জেতে (যার সম্ভাবনা কম) তাহলেও কোনও আফসোস থাকবে না। কারণ এগারো টিমের লিগে কুড়ি ম্যাচের পরে জামশেদপুরই চ্যাম্পিয়ন। তাদের পয়েন্ট ৪৩। দু নম্বরে আছে হায়দরাবাদ ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে। আর তাদের চেয়ে এক পয়েন্ট কম পেয়ে মোহনবাগন রইল তিন নম্বরে। চারে কেরালা ব্লাস্টার্সের পয়েন্ট হল ৩১। ১১ এবং ১৫ মার্চ জামশেদপুর সেমিফাইনালে খেলবে কেরালার সঙ্গে। আর ১২ ও ১৬ মার্চ হায়দরাবাদ এবং মোহনবাগানের ফাইনালে ওঠার লড়াই। ফাইনাল, আগেই বলেছি, ২০ মার্চ।

মাঠে নামার আগে দু দলের কাছে অঙ্কটা ছিল পরিষ্কার। জামশেদপুর ম্যাচ জিতলে বা ড্র হলে তারাই চ্যাম্পিয়ন। মোহনবাগানকে শুধু জিতলেই হত না, কম করে দু গোলের ব্যবধানে জিততে হত। ম্যাচ শুরুর পর থেকে এই অঙ্কটা দু দলের তাগিদের মধ্যে ফুটে ওঠে। মোহনবাগানকে জিততেই হত। তাই কিক অফ-এর সঙ্গে সঙ্গে তারা আক্রমণের ঢেউ তুলতে শুরু করে। বাঁ দিক থেকে লিস্টন কোলাসো তাঁর নিজস্ব গতিতে পুরো ডিফেন্সটাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাণ। কিন্তু তাঁর মাইনাসগুলো এদিন সঠিক ছিল না। বা বলা যায়, সেগুলোকে সঠিক হতে দেয়নি জামশেদপুর ডিফেন্স। এখানে একাই একশো নয়, একাই পাঁচশো হয়ে নিজেদের দুর্গ আগলালেন অধিনায়ক পিটার হার্টলে। বহু দিন পর একজন ডিফেন্ডারের খেলা দেখে মন ভরে গেল। বিরাটদেহী হার্টলে এ বছর প্রথম ম্যাচ থেকেই চোখে পড়ছেন। তাঁদের প্রথম খেলা ছিল ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে। সে ম্যাচে এক গোলে পিছিয়ে পড়া জামশেদপুরকে ম্যাচ হারার হাত থেকে হার্টলে বাঁচান নিজে গোল করে। আর শেষ ম্যাচে নিজে গোল করতে না পারলেও গোল খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে দেননি। কখনও হেড করে, কখনও বা ট্যাকল করে কিংবা চমৎকার আ্যান্টিশিপেশনের নমুনা রেখে তিনি বাগানের অ্যাটাকাদের ফনা তুলতে দেননি। তাই কোনওবার জনি কাউকোর শট হেড করে ক্লিয়ার করেন হার্টলে, কখনও বা রয় কৃষ্ণকে মোক্ষম সময়ে ট্যাকল করে বল কেড়ে নেন। এবং এই ব্যাপারে তিনি পাশে পেয়েছেন তাঁর বাকি ডিফেন্ডারদের। এদের পিছনে প্রচণ্ড সতর্ক ছিলেন গোলকিপার রেহনেশ। ঋত্বিক দাস গোল করলেন বলে জামশেদপুর ম্যাচটা জিতল। আর পিটার হার্টলে দুর্দান্ত খেলেন বলে তারা ম্যাচটা হারল না। এর পর ম্যাচের সেরার পুরস্কার হার্টলে ছাড়া অন্য কারুর পাওয়া উচিত ছিল না। অন্য কেউ পানওনি।

আগেই বলেছি তাগিদটা বেশি ছিল মোহনবাগানের। তা বলে কি জামশেদপুর আক্রমণ করেনি? করেছে। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলোতে তারা যেমন রে রে বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপক্ষের উপরে সেটা এদিন ছিল না। শুরুর দিকে ড্যানিয়েল চিমার একটা হেড ফিস্ট করে বাঁচিয়ে দেন অমরিন্দর। এ ছাড়া আর তাঁকে চোখে পড়েনি। গ্রেগ স্টূয়ার্ট যিনি এবার দশটা গোল করেছেন, তাঁকেও যেন তেমন চোখে পড়ল না। চিমাকে বিরতির একটু পরেই তুলে নিলেন কোচ ওয়েন কয়েল। গ্রেগ ছিলেন। ৫৬ মিনিটে গোলটার পিছনে তাঁর অবদানও যথেষ্ট। বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে তিনি যে শটটা নিলেন তা সন্দেশের বুটে লেগে ফিরে আসে, ফিরতি বলে মিডফিল্ডার ঋত্বিক দাস সুন্দর শটে গোল করেন। গ্রেগ স্টূয়ার্টের ফ্রি কিক কিংবা কর্নারগুলো অন্য দিনে যেমন বিষাক্ত হয়, এদিন তা দেখা যায়নি। আসলে জামশেদপুরের লক্ষ্য ছিল মোহনবাগানকে অ্যাটাকিং জোনে ফাঁকা জমি না দেওয়া। প্রয়োজনে তারা তাই একটু ঋআফ ফুটবলও খেলেছে। জামশেদপুরের পাঁচ জন হলুদ কার্ড দেখেছে। এদের মধ্যে ছিলেন আর এক বঙ্গ সন্তান প্রণয় হালদার। গোটা লিগটাই ভাল খেললেন প্রণয়। তাঁর পাশ দিয়ে বল নিয়ে বেরনো ছিল প্রায় অসম্ভব। পারফরম্যান্সের বিচারে হার্টলের পরেই থাকবেন প্রণয়।

অতএব জুয়ান ফেরান্দোর কাছে আধরাই থেকে গেল লিগ শিল্ড জেতা। টানা পনেরো ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর ষোল নম্বর ম্যাচে তিনি হারার স্বাদ পেলেন। মোহনবাগানের কোচের দায়িত্ব নিয়ে এই প্রথম হার তাঁর। এদিন তাঁর দল জেতার মতো খেলেনি। কেন যে শুরুটা ভাল করেও পরের দিকে গুটিয়ে গেল মোহনবাগান তা নিয়ে কাটা ছেঁড়া করতে হবে জুয়ানকে। টুর্নামেন্ট এখনও শেষ হয়নি। লিগ-শিল্ড না হোক আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ কিন্তু এখনও যায়নি। কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Jamshedpur FC, #Mohun Bagan fc, #ISL

আরো দেখুন