বর্ষায় দুর্ভোগ কমাতে তৎপর প্রশাসন, জল জমার ১৫০ অঞ্চল চিহ্নিত
আসছে বর্ষায় কলকাতা ও শহরতলির মানুষকে জমা জলের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে তৎপর রাজ্য। সোমবার পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে সেচদপ্তর মিলিতভাবে জল জমা ঠেকাতে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। বৈঠক হয় কলকাতা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পুরসভাগুলির সঙ্গেও। সেই আলোচনাতেই উঠে এসেছে প্রায় ১৫০টির মতো জায়গার কথা, যেখানে জল জমার কারণে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে স্থানীয়দের। এইসব জায়গায় জল-যন্ত্রণা দূর করতে মে মাসের মধ্যেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী শীঘ্রই এ নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন। কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া, বিধাননগর, উত্তর ২৪ পরগনার সব পুরসভা, মহেশতলা, রাজপুর-সোনারপুরের মতো এলাকার সমস্যা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন এবং সেচদপ্তরের সচিবরা। বিভিন্ন পুর আধিকারিকরাও তাঁদের এলাকায় কী কী কাজ করছেন, তা তুলে ধরেন বৈঠকে। উপস্থিত ছিলেন কেএমডিএ’র আধিকারিকরাও।
জমা জলের সমস্যা দূর করতে মূলত তিনটি ধাপে কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি কাজগুলি এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশনের অবস্থা, কোথায় কোথায় পলি তুলতে হবে, কোথায় নতুন করে পাম্প বসাতে হবে, বৈঠকে সবই খতিয়ে দেখা হয়। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই সেচদপ্তর কোন কোন নদী এবং খাল থেকে পলি তুলতে হবে, সেই তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে জেলাগুলির কাছে।
পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের বৈঠকের পর কলকাতা পুরসভায় সেচ এবং কেএমডিএ’র আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং।
কলকাতা এবং শহরতলি অঞ্চলে ২৭টি সেচ খাল রয়েছে। তারক সিং বলেন, ‘কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই একসঙ্গে সব খালের পলি তোলা সম্ভব নয়। সেচদপ্তর জানিয়েছে, আপাতত ১৬টি খাল সংস্কার করার জন্য ডিপিআর তৈরি হয়েছে। যে সব জায়গায় জমা জলের সমস্যা বেশি, সেই সব অঞ্চলের খালগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কার করা হবে। আগামী বর্ষার আগেই মোটামুটি কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।’
গত বছর বর্ষায় পূর্ব ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গা দীর্ঘদিন জলমগ্ন হয়েছিল। বিশেষ করে বাইপাস লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে জল যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছে বাসিন্দাদের। কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে দেখা যায়, মূলত, নিকাশি খালের বেহাল দশার কারণেই ভুগতে হয়েছে মহানগরীকে। তারপরেই খাল সংস্কারের উদ্যোগ শুরু হয়।
পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, আর্থিক সমস্যা থাকায় গত কয়েক মাস ধরেই খাল সংস্কারের কাজে হাত পড়েনি। প্রথমে দু’টি খালের টেন্ডার হয়েছিল। ডিপিআর হয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া চালিয়ে খাল সংস্কার করতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। তারপরে যদি টাকা বরাদ্দ হয়, তবে বর্ষার আগে খাল থেকে পলি তোলার কাজ কতটা গতি পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পুরসভার আধিকারিকরা। তবে এদিনের বৈঠকে সেই খাল সংস্কারের কাজ দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।