রাজ্য সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়ারা
ইউক্রেন থেকে আতঙ্কের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন রাজ্যের পড়ুয়ারা।
সকলেই এক যোগে বর্ণনা করেছেন যুদ্ধের বীভৎস রূপের কথা। চোখের সামনে সাজানো শহরকে ধ্বংস হতে দেখেছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত কিয়েভ থেকে ৫–৬ ঘণ্টার প্রবল ঠাণ্ডায় হেঁটে, তারপর ক্যাব ধরে রোমানিয়া সীমান্তে। সেখানে পৌঁছে ভারতীয় দূতাবাসে। এভাবেই দেশে ফিরেছেন বহরমপুরের ঋতম পাল, রঘুনাথগঞ্জের মোজাম্মেল হক আনসারিরা। তাঁরা জানান, দিল্লি, মুম্বইয়ে ছিলেন রাজ্যের অফিসাররা। নিখরচায় বাঙালি পড়ুয়াদের বাড়ি পৌঁছে দেয় রাজ্য সরকার।
বহরমপুর স্বর্ণময়ী রোডের ঋতম মেডিক্যালের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একরাশ আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ঋতমের কথায়, ‘আমরা আশ্রয় নিই এক স্কুলের বাঙ্কারে। বাঙ্কারে টানা ৩ দিন একবেলা খেয়েছি। তারপরই হাঁটা শুরু রোমানিয়া সীমান্তের জন্য। প্রবল ঠান্ডায় ৫–৬ কিমি হেঁটে, তারপর একটা ক্যাবের ব্যবস্থা করে সীমান্ত পার হই।’ একইভাবে হাঙ্গেরি সীমান্তে পৌঁছোন চতুর্থ বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া রঘুনাথগঞ্জের মোজাম্মেল। যুদ্ধের ১১ দিনের মাথায় বাড়ি ফিরলেন মহিষাদল থানার তেরপেখ্যা ও লক্ষ্যার বাসিন্দা দেবজিৎ বর্মন ও প্রীতম সামন্ত। কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ ও চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তাঁরা। তাঁরা ফিরে আসায় খুশি পরিবারের সকলে৷ তবে আতঙ্কের রেশ কাটেনি দেবজিৎ এবং প্রীতমের। চোখের সামনে চেনা শহরকে ধ্বংস হতে দেখেছেন তাঁরা। ভুলতে পারছেন না ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।
মেদিনীপুর শহরের কুইকোটার বাসিন্দা সায়ন্তন দাস। ইউক্রেন থেকে ফিরে আসায় তাঁকে সংবর্ধনা দিল কোতয়ালি থানার পুলিশ। রবিবার দুপুরে আইসি পার্থসারথি পাল তাঁর হাতে ফুলের স্তবক, মিষ্টি তুলে দেন।
কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সায়ন্তন। যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘সাইরেন বাজলে বাঙ্কারে চলে যেতাম। কিয়েভ থেকে লিভিক পর্যন্ত বিনামূল্যে ট্রেন পরিষেবা দেওয়া হয়েছিল৷ সেখান থেকে গাড়িতে রোমানিয়া সীমান্ত৷ পরে ভারতীয় দূতাবাসে আসি।’ সায়ন্তনের মা সুলতা দাস বলেন, ‘ছেলে ফিরেছে তাতেই শান্তি৷ চিন্তা ছিল৷ দুই দেশের সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বাড়িতে ফেরাতে পেরেছি ছেলেকে৷’
ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা নারিটের ডাক্তারি পড়ুয়া শেখ মিখাইল আলমের বাড়িতে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বিধায়ক সুকান্ত পাল। খারকিভে আটকে পড়া বাঁকুড়ার ডাক্তারি পড়ুয়া সৌমাল্য মুখার্জি বাড়ি ফেরায় খুশি পরিবারের সকলে। সৌমাল্য খারকিভ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হঠাৎ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়লাম। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের হস্টেলের বেসমেন্টে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।’ ইউক্রেন থেকে হুগলির সিঙ্গুরের নসিবপুরের বাড়িতে ফিরলেন ডাক্তারি পড়ুয়া রাজলক্ষ্মী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে ফিরে যুদ্ধের আতঙ্ক থেকে নিশ্চিন্তে আছি।’ ইউক্রেন থেকে টানা সাতদিন ধরে বহু পথ ঘুরে বাড়ি ফিরলেন হাবরার কুমড়া কাশীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা নিশা বিশ্বাস।
bengal-students-came-from-ukraine