বীরাঙ্গনা! অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্য চন্দননগরের পিয়ালির
ছোট থেকেই তাঁকে ডাকে পাহাড়। সবুজ পাহাড় নয়, পদে পদে যেখানে অন্তহীন আতঙ্ক, সেই পাহাড়। গভীর ঘুমেও জাগিয়ে দিয়ে ডাকে, আয় ছুটে আয়। তিনি শুধু ছুটে যান তাই নয়, পাহাড়ের শৃঙ্গে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে পদতলে রেখে একবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নেন। সেটাই তাঁর নারীদিবস। নিজের ভাগ্যকে জিতে নেওয়ার বার্তা। তিনি সাবেক ফরাসি কলোনির প্রান্তিক নারী পিয়ালি বসাক। এবারের নারী দিবসে যাঁর চ্যালেঞ্জ অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এভারেস্ট জয়। যা এখনও কোনও ভারতীয় নারীর অধরা।
২৮ মার্চ চন্দননগর থেকে রওনা দিচ্ছেন বছর একত্রিশের পিয়ালি। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। টানাটানির সংসার। কিছুটা নিজের আর কিছুটা আম জনতার সাহায্যে চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি হচ্ছেন এই তরুণী। আর্থিক সঙ্কট থাকলেও তিনি আত্মবিশ্বাসে ধনী। তাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গতেই লক্ষ্য স্থির করেছেন। সঙ্গে লোৎসে শৃঙ্গকেও জয় করতে চান। অক্সিজেন ছাড়াই। ৭ এপ্রিল কাঠমাণ্ডু থেকে শুরু হবে অভিযান। ইতিহাস বলে, শীর্ণকায়া এই তরুণী এক বছর আগে ধৌলাগিরি জয় করেছিলেন। পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গে অক্সিজেন ছাড়াই প্রথম পা রাখা নারী তিনি। সেই জয় যদিও তাঁর জীবনকে খুব একটা বদলে দিতে পারেনি। বাড়িতে অ্যালজাইমার আক্রান্ত বাবা, ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ লক্ষাধিক। সম্বল বলতে সহৃদয় মানুষের দান, পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন আর প্রবল জেদ। শিক্ষকতা, বাড়ির কাজ সামলে বাহ্যিকভাবে বিধ্বস্ত পিয়ালীদেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সোমবার দুপুরে। কথা বলতেই বেরিয়ে এল বিধ্বস্ত চেহারাটা বাইরেরই, মানুষটি ইস্পাতকঠিন। চ্যালেঞ্জটা বড় বেশি কঠিন হল না? পিয়ালিদেবী বলেন, কঠিন না হলে আর চ্যালেঞ্জ কীসের! পাঁচ বছর বয়সে তেনজিং নোরগের গল্প পড়েছিলাম। তখন থেকেই পাহাড়ের ডাক শুনতে পাই। ২০১৮ সালে মানাসলু জয়ের পরে জেদ আরও বেড়েছিল। তাই অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরির চ্যালেঞ্জ নিই। এবার পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গই লক্ষ্য। অনেকের সাহায্য আর ভালোবাসাটাই বাড়তি ভরসা জোগায়। চন্দননগরের কাঁটাপুকুরের বাসিন্দার চোয়াল শক্ত হয়। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলার মোহিত নন্দী পিয়ালিদেবীর অভিযানের অন্যতম সহায়। তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে যতটা পারছি আর্থিকভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আমাদের বিশ্বাস, উনি ইতিহাস তৈরি করবেন।
তা সত্যিই, ইতিহাসকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলার এই মেয়ে। যখন তিনি এভারেস্টের শৃঙ্গে চোখ রেখে এগিয়ে যাবেন, তখন নারীদিবসের চাঞ্চল্য থিতিয়ে আসবে। কিন্তু তাঁকে চলতে হবে অক্সিজেন ছাড়া খাড়াই পথে, তুষার ঢাকা জমিতে। যেভাবে প্রতিদিন টানাপোড়েনের জীবনে চলেন। ‘আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা’, সেই নারীকে যে বলতেই হবে। তবেই অর্ধেক ভুবন নয়, ভুবনজোড়া আওয়াজ উঠবে, চির-বিস্ময় বিশ্ব বিধাত্রীর।