ভারতের প্রথম স্ট্রোক হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে ভবানীপুরে
দেশের প্রথম স্ট্রোক হাসপাতাল হতে চলেছে বাংলায়। এটা হচ্ছে ভবানীপুরের পুলিস হাসপাতালে। যে-কোনও নিউরো ইমার্জেন্সিতে যত রোগী আসেন, তাঁদের ৯০ শতাংশেরই ব্রেন স্ট্রোকের সমস্যা থাকে। এখন ৩৫-৪০-৪৫ বছরের যুবক এবং মধ্যবয়সিরা পর্যন্ত অনেকেই যখন তখন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। ‘এই যায় সেই যায়’ অবস্থায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইমার্জেন্সিতে। কিন্তু, রোগী বাড়লেও স্ট্রোকের চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়েনি। এসব মাথায় রেখে কিছুদিন আগেই পুলিস হাসপাতাল পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্যকর্তারা। সঙ্গে ছিলেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির কয়েকজন খ্যাতনামা চিকিৎসকও। পিজি এবং বাঙুর থেকে ঢিল ছোড়া দূরে এই হাসপাতালটি পছন্দও হয় স্বাস্থ্যভবনের। সবদিক বিচার করে ঠিক হয়েছে এই হাসপাতালটিকে স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য ঢেলে সাজা হবে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্যদপ্তর বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট এবং বাঙুরের নিউরোলজির অধ্যাপক বিমানকান্তি রায়কে দায়িত্ব দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, এত রোগ থাকতে হঠাৎ শুধু স্ট্রোকের জন্য আলাদা হাসপাতাল কেন? কেন শুধুই বেড়ে যাচ্ছে এই রোগীর সংখ্যা? স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন: (১) নির্দিষ্ট স্ট্রোক হাসপাতাল থাকলে স্ট্রোক রোগীদের একই ধরনের ম্যানেজমেন্ট বা চিকিৎসা পদ্ধতির ছাতার তলায় আনা সম্ভব। (২) স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিগুলিও একই বাড়িতে আনা যাবে। যেমন, থ্রম্বোলাইসিস (ধমনির মধ্যে হঠাৎ জমাট বাঁধা রক্ত ওষুধ দিয়ে গলিয়ে দেওয়া), মেডিক্যাল থ্রম্বেকটমি (গলাতে না-পারা জমাট রক্ত ক্যাথিটার ঢুকিয়ে বের করে আনা) ইত্যাদি আরও ভালোভাবে করা সম্ভব হবে। (৩) স্ট্রোকের রোগীদের অসুখ-পরবর্তী রিহ্যাবের মাধ্যমে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনাও অনেক বেশি সম্ভব হবে। (৪) স্ট্রোক নিয়ে নানা গবেষণাও চলতে পারবে।
প্রসঙ্গত, বাংলা-সহ পূর্ব ভারতে মৃত্যু অথবা স্থায়ী পক্ষাঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ স্ট্রোক। তা সত্ত্বেও স্ট্রোক সচেতনতা এখানে বরাবরই ভীষণ কম। স্ট্রোক ফাউন্ডেশন গড়ে সেই কাজ শুরু করেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট দীপেশ মণ্ডল। কিন্তু সরকারি স্তরে সব জায়গায় এখনও স্ট্রোক চিকিৎসার পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। তাই পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবিলায় রাজ্যের ১০ জেলার সঙ্গে টেলিমেডিসিনে স্ট্রোক চিকিৎসা চালু করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। বাঙুর সেই কাজ করছে। কিন্তু এই পরিষেবাটি সামনাসামনি বসে ডাক্তারির বিকল্প নয়। তাই সঠিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালই জরুরি। অন্যদিকে, রাজ্যের স্নায়ুরোগ চিকিৎসার শীর্ষ সরকারি কেন্দ্র বিআইএন এবং রামরিকদাস হরলালকা হাসপাতাল মিলিয়ে সব ধরনের স্নায়ুরোগের চিকিৎসার জন্য শয্যা রয়েছে মাত্র ১৮০টি। এটা চাহিদার সিন্ধুতে বিন্দুও নয়! স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, স্ট্রোকের রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর প্রয়োজন। বাঙুরে স্থানাভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সেটা পুলিস হাসপাতালে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।