পয়লা এপ্রিল থেকে এমআইএসের সুদ মিলবে ডাকঘরের সেভিংস অ্যাকাউন্টে
আগামী মাস থেকে গ্রাহকদের নগদে সুদ দেওয়া বন্ধ করতে চলছে পোস্ট অফিস। এর ফলে মান্থলি ইনকাম স্কিম (এমআইএস), সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম ও টাইম ডিপোজিটের মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে টাকা রেখে সরাসরি যাঁরা নগদে সুদ নিতে অভ্যস্ত, তাঁরা আর তা পাবেন না। তা নিতে হবে পোস্ট অফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে। সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সেই সঞ্চয় প্রকল্পগুলির লিঙ্ক করলে, তবেই মিলবে সুদ। তবে এর পাশাপাশি আরও একটি সুযোগ গ্রাহকদের জন্য করে দিচ্ছে ডাক বিভাগ। চাইলে তাঁরা সুদের টাকা ব্যাঙ্ক থেকেও তুলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করাতে হবে পোস্ট অফিসের সঞ্চয় প্রকল্পগুলির।
এখন পোস্ট অফিসে কোনও সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখতে গেলে, সেখানে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে সঞ্চয় প্রকল্পগুলির লিঙ্ক করানো নেই। যাঁদের তা করা থাকে, তাঁদের প্রাপ্য সুদ সেভিংস অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে যায়। তাঁরা এখন যেভাবে সুদের টাকা তুলছেন, সেভাবেই তুলতে পারবেন। কিন্তু যাঁদের লিঙ্ক করানো থাকে না, তাঁরা সাধারণত সরাসরি নগদে তুলে নেন সুদের টাকা। যদি তা না তোলেন, তাহলে তা পোস্ট অফিসের কাছেই গচ্ছিত থাকে। তার জন্য সুদের উপর সুদ মেলে না।
ডাক বিভাগ বলছে, সব গ্রাহককেই সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে বা ব্যাঙ্কের সঙ্গে সঞ্চয় প্রকল্পগুলির লিঙ্ক করানো এবার বাধ্যতামূলক। ডাককর্তাদের দাবি, বহু গ্রাহকই জানেন না, তাঁরা টাইম ডিপোজিট থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুদ তুলে নিতে পারেন। আবার সুদ না তুলে, তা ডাক বিভাগের কাছে গচ্ছিত রাখলে, তার উপরও যে বাড়তি সুদ পাওয়া যায় না, তাও অনেকের কাছেই অজানা। যদি গ্রাহক সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করিয়ে নেন, তাহলে সুদ চলে আসবে সেই অ্যাকাউন্টে। সেক্ষেত্রে সুদের উপর সুদ মিলবে। ডেবিট কার্ড বা ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সুদ তোলার সুযোগও থাকবে। তাই বাড়িতে বসেও লেনদেনের সুযোগ মিলবে। আলাদা করে উইথড্রল ফর্ম পূরণ করে টাকার তোলার ঝামেলা থাকবে না। যাঁরা রেকারিং ডিপোজিটে মাসে মাসে টাকা জমা করেন, তাঁরা সরাসরি সেই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করার নির্দেশ পোস্ট অফিসকে দিতে পারবেন।
ডাক বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, যদি কেউ পোস্ট অফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের টাকা জমা না করে তা ব্যাঙ্কে জমা করতে চান, এবার সেই সুযোগও করে দেওয়া হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ‘ক্যানসেলড চেক’ ও নির্দিষ্ট ফর্ম জমা করতে হবে। এই পরিষেবাটি দিতে ডাক বিভাগকে সাহায্য করবে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সব ব্যাঙ্কের গ্রাহকই এই পরিষেবা পেতে পারেন।
তবে ডাক বিভাগের এই উদ্যোগকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না পোস্টাল এজেন্টরা। তাঁদের বক্তব্য, এতে ঘুরপথে এজেন্টদের ভাতে মারার চক্রান্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্মল সেভিংস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস বলেন, ডাক বিভাগ বলছে, যাঁরা রেকারিং ডিপোজিটে মাসে মাসে টাকা রাখেন, তাঁরা চাইলে সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া সুদ থেকে সেই রেকারিং ডিপোজিটে সরাসরি টাকা জমা করতে পারবেন। অর্থাৎ এজেন্টকে এড়িয়ে সেই কাজের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে গ্রাহককে। প্রতি মাসে রেকারিং ডিপোজিটে গ্রাহকের টাকা জমা করে তা থেকে সামান্য কমিশন পান এজেন্টরা। শুধু মহিলা এজেন্টরাই এই কাজ করতে পারেন। হাজার হাজার মহিলাকে যাতে কমিশন না দিতে হয়, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্র।