বাংলার দেশি মদের নাম দেশীয় আত্মা! ভয়ঙ্করী তর্জমা আবগারি দপ্তরের
দেশি মদের বাংলা নাম দেশীয় আত্মা! নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! ভাবছেন কী এগুলো। রাজ্যের আবগারি দপ্তরের তর্জমা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে দেশি ও বিলিতি মদের মূল ডিস্ট্রিবিউটর রাজ্য আবগারি দপ্তরের অধীন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন’-এর (বেভকো) সঙ্গে সুরা ব্যবসায়ীদের একটি চুক্তি হতে চলেছে। সেই চুক্তির কিছু শর্ত নিয়ে একটা সময় পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নানান প্রশ্ন থাকলেও, শেষ অবধি তাঁরা মেনে নিয়েছেন। বেভকোর নির্দেশ মতোই ১০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করাও শুরু করেছেন রাজ্যের বিলিতি ও দেশি মদের ব্যবসায়ীরা। সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চুক্তির বাংলা বয়ান। বিভৎষ বঙ্গানুবাদে দেশি মদের নতুন নাম ‘দেশীয় আত্মা’।
চুক্তিপত্র কী বয়ানে লেখা হবে, তা জানিয়ে মদ ব্যবসায়ীদের একটি নমুনা পাঠিয়েছে বেভকো। ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় লেখা একটি চুক্তির বয়ানও পাঠানো হয়েছে। সেই বাংলা অনুবাদ নিয়েই বেঁধেছে গোল! ইংরেজি বয়ানে লেখা রয়েছে, ‘এগ্রিমেন্ট উইথ দ্য রিটেলার অব কান্ট্রি স্পিরিট অ্যান্ড / অর ফরেন লিকার।’ এর বাংলা অনুবাদে লেখা হয়েছে, ‘দেশীয় আত্মা এবং / অথবা বিদেশী মদের খুচরা বিক্রেতার সাথে চুক্তি।’
এতেই ক্ষান্ত হয়নি! তর্জমার গোটা বয়ান জুড়ে এমন অনেক বাংলা শব্দ রয়েছে, যা দেশে ভিড়মি খাওয়ার জোগাড়, আত্মারাম খাঁচাছাড়া মদ বিক্রেতাদের। চুক্তিতে ইংরেজিতে ‘এগ্জিকিউট’ শব্দটি রয়েছে। তার বাংলা করা হয়েছে ‘মৃত্যুদণ্ড’! ইংরেজিতে রয়েছে, ‘টু বি এগ্জিকিউটেড অন ইন্ডিয়ান নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপার অব রুপিজ ১০০ ডেনোমেশন।’ তার বাংলা হয়েছে, ‘রুপির ভারতীয় নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে / ১০০ টাকা মূল্যমান।’
চুক্তির বয়ান পাওয়ার পরেই মদ ব্যবসায়ীদের চিন্তা বাড়িয়েছে দুটি শব্দ, দেশীয় আত্মা এবং মৃত্যুদণ্ড। উঠেছে হাসির রোল, চলছে রসিকতা।
রাজ্যের মদ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকার, কান্ট্রি স্পিরিট অ্যান্ড অফ অ্যান্ড অন শপ অ্যান্ড হোটেল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এমন বাংলা তর্জমা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি। ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদে ভুল অনেকেরই হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলা পণ্ডিতদের ভাষা। সেটা নিয়ে এমন করাটা আপত্তিকর। এটা বাংলা ভাষার অপমান।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘দেশি মদের ভাল বাংলা করতে হলে ‘দেশীয় সুরা’ করতেই পারত। জানি না কোন পণ্ডিত এটা করেছেন! তবে এমন বয়ান পাঠানোর আগে বাংলা ভাষায় বিশেষজ্ঞ কারও সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।’’
যাদের অনুবাদ নিয়ে এতো কান্ড সেই আবগারি দপ্তর মুখে কুলুপ এঁটেছেন, দপ্তরের তরফে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, এটা সম্ভবত কোনও সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনুবাদের ফল। কম্পিউটার ‘স্পিরিট’ মানে ‘আত্মা’ করেছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ভুল যে ভাবেই হোক না কেন, এটা ঠিক যে, পাঠানোর আগে একবার ভাল করে দেখে নেওয়া উচিত ছিল।”