ধোপে টিকলো না মোদী বিরোধী ইস্যু! উত্তরাখণ্ড-মণিপুর-গোয়ায় আশাতীত ফল বিজেপির
গত বছর টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দেবভূমে। একাধিকবার বদলে যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম। বিধানসভার অঙ্কে এর প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু সব হিসেব গুলিয়ে গেল। বলা ভাল, বিরোধী দলগুলিকে কার্যত চমকে দিল বিজেপি। আরও একবার গেরুয়া রঙের প্রলেপ লাগল দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে।
উত্তরাখণ্ডের বিধানসভার ফলাফলে দু’টি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। প্রথমত, কোনও দল হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছর অন্তর এ রাজ্যে ক্ষমতা বদলের ধারা রয়েছে। সেই হিসেবেও পাল্লা খানিকটা ভারী ছিল হাত শিবিরের। কিন্তু এদিন সমস্ত সমীকরণ ভুল প্রমাণ করে আরও একবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে হারলেও গেরুয়া শিবিরের (BJP) প্রতি আস্থা ধরে রাখলেন সে রাজ্যের আমজনতা। কোন ফ্যাক্টরে সম্ভব হল এমনটা? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে দ্রুত মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তনের বিষয়টি বিজেপির পক্ষে কাজ করেছে। ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতের পর তিরথ সিং রাওয়াত হয়ে ক্ষমতা আসে পুষ্কর সিং ধামির হাতে। অল্প সময়ের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিশেষ ছাপ ফেলতে না পারলেও বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি এখানেও সফল। কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগে ত্রিশঙ্কু বিধানসভার সম্ভাবনার মুখে ঝামা ঘষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই এ রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফিরছে গেরুয়া শিবির।
বুথ ফেরত সমীক্ষায় গোয়ার ছবিটাও খানিকটা একইরকম ছিল। কংগ্রেস (Congress) এবং বিজেপির মধ্যে সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর হওয়ার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস জোট। সেখানে ১৩টি আসন আসে বিজেপির দখলে। তারপরও ঘোড়া কেনাবেচা করে সরকার গঠন করে গেরুয়া শিবিরই। তবে এবার কংগ্রেসের কাছে শাসকবিরোধী একাধিক ইস্যু ছিল। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব-সহ কোনও বিষয়কেই হাতিয়ার করতে পারেনি তারা। গান্ধী পরিবারের প্রতি দেশবাসীর ভরসা হারানোর ছবিটা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। উলটোদিকে, আত্মনির্ভরতার ছবি তুলে ধরে এসব ইস্যু ঢেকে দিতে সফল হয়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্তও অবশ্য এবারের নির্বাচনের বিরাট কোনও ফল আশা করেননি। তাই তিনি বলেছিলেন, বাইশে ২২। অর্থাৎ ৪০টির মধ্যে ২২টি আসন তাঁরা পাওয়ার আশা রেখেছিলেন। যদিও সেই লক্ষ্যেও পৌঁছনো হয়নি। তবে একক বৃহত্তম দলের তকমা পেয়েছে তারা। তাছাড়া গোয়ায় এবার ১২টি দলের মোট ৩০১ জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে বিজেপি ও কংগ্রেস ছাড়াও অন্যান্য দলেও ভোট পড়েছে। আর আঞ্চলিক শক্তিগুলি মাথাচাড়া দেওয়ায় আরও দুর্বল হয়েছে কংগ্রেস।
এবার আসা যাক মণিপুরের কথায়। মণিপুরের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি সবসময়ই কেন্দ্রকে সমর্থনের পথে হেঁটে থাকে। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের সময়ও কংগ্রেসের হাত ধরেছিল তারা। তারপর থেকে মোদি সরকারেই ভরসা রেখে এসেছে মণিপুর। রাজনীতির ছবিটা তাই এবারও বদলাল না। যদিও আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি থেকে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে সীমানা সমস্যার মতো ইস্যুগুলি সরকার বিরোধী কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তা সত্ত্বেও নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে সফল গেরুয়া শিবির। এই নির্বাচনে প্রথমবার কোনও আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট না করেও কার্যত আশাতীত ফল করল বিজেপি।