বাংলা টেলি জগৎকে কুর্ণিশ, টেলি সম্মানের মঞ্চ মমতাময়
ভিড়ে ঠাসা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। বিকেল চারটে বেজে কয়েক মিনিট। প্রবেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাততালির আওয়াজে গমগম করছে স্টেডিয়াম। দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন তিনি। মঞ্চে তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত টেলি অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান শুরু হতে চলেছে। সঞ্চালনায় ইন্দ্রাণী হালদার ও সাহেব চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচের মাধ্যমে। এরপরই মঞ্চে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রীসহ রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সচিব শান্তনু বসু প্রমুখ। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। টালিগঞ্জের স্টুডিও থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে বারুইপুরে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের পশ্চিমবঙ্গ টেলি অ্যাকাডেমি ক্যাম্পাসের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মমতা। বারুইপুরের টেলি অ্যাকাডেমিতে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেত্রী দোলন রায় ও সরকারের আধিকারিকরা। শ্যুটিং সহ ফিল্ম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও এখানে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘কোভিডের সময় গৃহবন্দি মানুষের বন্ধু ছিল টেলিভিশন। আমি নিজেও রাতের দিকে সময় পেলে সিরিয়াল দেখি। নতুন টেলি অ্যাকাডেমি সকলের গন্তব্যস্থল হয়ে উঠবে। অনেকখানি অর্থনীতি এই ইন্ডাস্ট্রির উপর নির্ভর করে।’
মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে টেলিভিশন ধারাবাহিকের বিভিন্ন বিভাগের জয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন। নন ফিকশনের জন্য সেরা পরিচালকের শিরোপা পেয়েছেন বিকাশ শরফ ও অভিজিৎ সেন। ‘মন ফাগুন’ ও ‘সাঁঝের বাতি’ ধারাবাহিকের জন্য সেরা পরিচালক হয়েছেন সৌমেন হালদার।
টেলি অ্যাকাডেমি প্রদত্ত বিশেষ সম্মান ‘পাদপ্রদীপের আলোয়’ পুরস্কার প্রদান করার জন্য মঞ্চ ছেড়ে অভিনেতা শান্তিগোপাল মুখোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে যান মমতা। বাংলা ধারাবাহিকের একাধিক অভিনেতাদের সঙ্গে প্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী দত্ত। সঞ্চালনায় অন্য স্বাদ যোগ করেন কাঞ্চন মল্লিক ও অপরাজিতা আঢ্য। লোকগীতি পরিবেশন করেন ইমন চক্রবর্তী, স্বাগতা মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় ও দোহার। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার প্রদান করা হয় শকুন্তলা বড়ুয়াকে। তার সঙ্গে প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রয়াত অভিনেতার কন্যা পৌলমী। বিশেষ সম্মান প্রদান করা হয় ক্যান্সার জয়ী অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মাকে।
বিধায়ক লাভলি মৈত্রকে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা গেল। চমক এখনও বাকি। প্রয়াত বাপি লাহিড়ী, লতা মঙ্গেশকরকে গানে গানে শ্রদ্ধা জানালেন বাবুল সুপ্রিয়। আবারও পুরস্কার প্রদানের পালা। আবারও মুখ্যমন্ত্রীর ডাক পড়ল। সেরা শিশু শিল্পীর পুরস্কার পেল ‘প্রথমা কাদম্বিনী’র মেঘন। ‘শ্রীময়ী’র জুন আন্টি অর্থাৎ ঊষসী চক্রবর্তী হলেন সেরা খল নায়িকা। সেরা অনস্ক্রিন কাপল ‘মন ফাগুন’-এর শন ও সৃজলা। ‘খড়কুটো’র তৃণা ও কৌশিকও ওই একই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ‘খড়কুটো’র ঝুলিতে রয়েছে সেরা গল্পের পুরস্কারও। সেরা প্রযোজক হয়েছেন স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সেরা অভিনেত্রী ‘মিঠাই’-এর সৌমিতৃষা কুণ্ডু ও ‘মোহর’-এর জন্য সোনামণি সাহা। সেরা অভিনেতা ‘মিঠাই’-এর আদৃত রায় ও ‘মোহর’-এর প্রতীক সেন।
এসবের মাঝখানে অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বড়পর্দায় তাঁকে দেখাতেই দর্শক হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানাতে শুরু করেন। ‘দাদাগিরি’র জন্য সৌরভই হলেন সেরা নন-ফিকশন সঞ্চালক। জনপ্রিয় ধারাবাহিকের শিরোপা পেল ‘মিঠাই’। সেরা পরিবারের শিরোপা অর্জন করেছে ‘খড়কুটো’ ও ‘মন ফাগুন’। ততক্ষণে সঞ্চালনায় এসেছেন জুন মালিয়া ও কুশল চক্রবর্তী।
চমক কি এত সহজে শেষ হয়! শেষ পাতে ছিল জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও পলক মুছলের গান। তাঁরা প্রথমে মমতার লেখা একটি গান শোনান। অনুষ্ঠান শেষে নেতাজি ইন্ডোরের বাইরে অগণিত মানুষ তাঁদের পছন্দের নায়ক-নায়িকার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য ভিড় জমান। অনেক শিল্পীকেই অনুরাগীদের আবদার হাসি মুখে মেটাতে দেখা গেল।