এবছরও অনিশ্চিত বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব! ছোট করে হতে পারে নিয়মরক্ষার দোল
শান্তিনিকেতনে এবার ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৮মার্চ দোল পূর্ণিমা। মাঝে হাতে মাত্র এক সপ্তাহ সময়। অন্যান্যবার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সঙ্গীত ভবনে চুটিয়ে মহড়া চলে পড়ুয়াদের। কিন্তু এবছর এখনও নাচগানের মহড়া দেখা যায়নি। এই মুহূর্তে হস্টেল খোলাসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের জেরে অচলাবস্থা চলছে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে। হস্টেল ফিরে না পেয়ে অধিকাংশ পড়ুয়া নিজের বাড়িতে রয়েছেন। ফলে অল্প সময়ে বসন্ত উৎসব আয়োজন কার্যত অসম্ভব মনে করছেন অনেকে। তবে ঘরোয়াভাবে ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব আয়োজন করা হতে পারে বলে বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন। তিনি জানান, গতবছরের মতো দোলের পরিবর্তে অন্য দিন বসন্ত উৎসব পালিত হতে পারে, তবে সবটাই নির্ভর করছে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর।
এদিকে দোল উৎসব উপলক্ষে পর্যটকরা ইতিমধ্যেই হোটেল বুকিং করতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন বোলপুর হোটেল মালিক অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বসন্ত উৎসব আয়োজন না করলে ব্যবসা মার খাওয়ার আশঙ্কা করছে তারা। তবে অনিশ্চয়তার মাঝেও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের হাট ও জামবুনি দুর্গাপুজো কমিটি সহ বিভিন্ন জায়গায় অন্য স্বাদের বসন্ত উৎসব আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
মূলত, বসন্ত উৎসবের সকালে ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল’ গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে আবির মেখে রঙিন মুহূর্ত উদযাপন করেন ছাত্র-ছাত্রী ও প্রাক্তনী, শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক সহ বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা। সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, চণ্ডালিকার মতো বিখ্যাত নৃত্যনাট্যগুলি বছরের পর বছর পরিবেশন করেন সঙ্গীত ভবনের পড়ুয়ারা। সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান আয়োজন হয় বলে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রতি বছরই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় করেন।
এই অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে উপকৃত হন শান্তিনিকেতনের পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষজন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০সালে তা বাতিল ও গতবছর ছোট আকারে হলেও ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সচল হওয়ায় অনেকেই আশা করেছিলেন বসন্ত উৎসব বড় আকারে আয়োজন করবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও সঙ্গীত ভবনে নাচগানের মহড়া না হওয়ায় বসন্ত উৎসব ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে বিকল্প বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে শান্তিনিকেতন সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাট ও জামবুনি দুর্গাপুজো কমিটি। জামবুনির উদ্যোক্তা তাপস মণ্ডল বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট ঐতিহ্যগুলি বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য যেভাবে নষ্ট করছেন তা আমরা হতে দেব না। তাই বিশ্বভারতীর দোল উৎসব নিয়ে দোলাচলের মধ্যেও বসন্ত উৎসব আয়োজন করে ঐতিহ্য বজায় রাখব। যদিও এব্যাপারে বিশ্বভারতীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।