ইতিহাস গড়ে আজ বিধানসভায় বাজেট পেশ করবেন চন্দ্রিমা
আজ শুক্রবার বিধানসভায় পেশ হবে রাজ্য বাজেট। এবারের বাজেট অনেকগুলি কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, করোনা পর্বের দু’বছরের অর্থনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে হতে চলেছে এই বাজেট। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্বেও বাংলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে রাজ্য কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা পরিস্কার হবে এই বাজেটে। গতবারের বাজেটে তৃণমূল স্তরে মানুষের হাতে নগদের জোগান নিশ্চিত করায় জোর দেওয়া হয়েছিল। তাতেই করোনার পর ঘুরতে শুরু করে রাজ্যের অর্থনীতির চাকা। বেড়েছে জিডিপিও। যা জাতীয় গড়ের তুলনায়ও বেশি। আবার গত আট ন’মাসে রাজ্যের কোষাগারের উপর চাপও বেড়েছে অনেকগুণ। তা সত্ত্বেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে শুরু করে সমস্ত সামাজিক প্রকল্পের উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যায় প্রত্যেক মাসের প্রথম সপ্তাহতেই। সূত্রের খবর, এবারের বাজেটে সামাজিক প্রকল্প ও কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে শিল্পায়ন এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। তবে গরিব-মধ্যবিত্তের উপর কোনও বোঝা চাপছে না এই বাজেটে।
আগামী এপ্রিলে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। প্রশাসনিক মহলে গুঞ্জন, বাণিজ্য সম্মেলনকে সামনে রেখে শিল্পের জন্য বেশকিছু ঘোষণা হতে পারে শুক্রবারের বাজেটে। তাতে যেমন উপকৃত হবে ক্ষুদ্র শিল্প, তেমনই টানা যাবে ভারী শিল্পের জন্য বিনিয়োগও। রাজ্যে নির্মাণ শিল্পও এক নতুন মাত্রায় পৌঁছবে। প্রসঙ্গত, গতবারের বাজেটে শহর ও গ্রামাঞ্চলে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি খাতে ২ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড় দেওয়াতে বেড়েছে রাজস্ব। প্রশাসনিক মহলের খবর, রাজস্ব আদায়ের এই পথ খোলা রাখতে স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড়ের মেয়াদ আরও বাড়াতে পারে রাজ্য। সূত্রের খবর, পর্যটন শিল্পের জন্যেও থাকতে পারে কিছু নতুন ঘোষণা। ‘হোম-স্টে’ ব্যবসায় উৎসাহ দিতে নতুন কোনও প্রকল্প রাজ্য ঘোষণা করে কি না, এখন সেটাই দেখার।
গত অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কর আদায় খানিক বাড়তে পারে বলেই মত রাজ্যের। গত বছর কর আদায় হয়েছিল প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা। এই অর্থবর্ষে তা ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা ছুঁতে পারে বলেই নবান্নের কর্তাদের মত। কারণ আবগারি ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় ছাড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়াতেও, কর আদায় বেড়েছে বিগত কিছু মাসে। তবে জিএসটি ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খাতে কেন্দ্রের কাছে বকেয়া প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। একাধিকবার দরবার করেও মেলেনি কোন ফল। শুক্রবার দুটোয় প্রথমবার বাজেট পেশ করবেন অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। আর বাজেট পেশ করার সময় বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ‘দুয়োরানি’ সুলভ আচরণের কথাও উঠতে পারে তাঁর ভাষণে।
নতুন প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি চলতি প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত শেষ করতে জোর দিচ্ছে রাজ্য। এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়। যার কারণে ইতিমধ্যে রাজ্য নিয়ে এসেছে ‘সমন্বয় পোর্টাল’। রাজ্য কীভাবে সমস্ত দপ্তরের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে উদ্যোগী, সেই বিষয়টিও থাকতে পারে বাজেটে।