সভ্য কারা? রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে মনে পড়ে যায় মানিকবাবুর এই ছবির কথা
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ, আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশকে আক্রমণ করেছে, কোনদিন ভেবে ছিলেন এমনটা হবে? যুদ্ধের আবহে মাথাচাড়া দিচ্ছে বর্ণবৈষম্য, মানুষ মারা যাচ্ছেন সেটা চিন্তার নয়! কোন রঙের চামড়ার মানুষ মরছে সেটাই হয়ে উঠছে আলোচ্য…একেই কি বলে সভ্যতা?
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর মনে পড়ে যাচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের আগন্তুক ছবির সেই দৃশ্য। উৎপল দত্ত এবং ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের সেই তর্ক। সভ্য কারা? যারা ঠান্ডা ঘরে বসে একটি দেশকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তারা? একটি জনপদকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বোমারু বিমান প্রেরণ করার আগে যাদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়না তারাই কি সভ্য? কাতারে কাতারে মানুষের জীবনহানি করে কোন সভ্যতার নিদর্শন রাখছেন উন্নত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা?
বিদ্যাসাগর সভ্য অসভ্য গল্পে লিখে গিয়েছিলেন সভ্যতার মানে…বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাইটাও কি পড়েননি আপনারা? আজ বিশ্ব এক অমোঘ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সভ্য কারা? যাদের টেবিল আমার আপনার ভাগ্য নির্ধারণ হয়, তারাই কি সভ্যতার সংজ্ঞা ঠিক করে দেবে? নাকি সভ্যতার কোন সংজ্ঞা আদৌ হয়?
নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় লুকিয়ে আছে অলীক স্বপ্ন! বন্য সভ্যতাই আসলে বুনিয়াদ। কুমির আর বাঘের ভয়কে উপেক্ষা করে যে লোকটা সুন্দরবনে মধু আনতে জঙ্গলে ঢুকছে সেও সভ্যতার অংশ, আপনি ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে বসে হানিকারক জীবন থেকে মুক্তি পেতে হানি খেতে খেতে তাকে অস্বীকার করতে পারেন না। যে আব্দুল ছোট্ট তল্কি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের তোয়াক্কা না করে আমার আপনার জন্য মাছ ধরতে যায় সেও তো সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ! যে মেয়েটি কাঁধের সঙ্গে বাচ্চা বেঁধে আপনার বিকেলের ফার্স্ট ফ্লাস মকাইবাড়ি চা তুলতে যায়, তাকে কি আপনি সভ্যতা অংশ হিসেবে অস্বীকার করতে পারেন?
মাদল আর মহুয়ায় আদিবাসীদের না চিনে, চিনতে শিখুন আসল সভ্যতা; বন্য সভ্যতা যেখানে সব কিছুই স্বতঃস্ফূর্ত… আর তারপর প্রশ্ন করুন সভ্য কারা…