রাজ্যের আর্সেনিক কবলিত ১০জেলায় বিকল্প সেচের ব্যবস্থা কৃষিদপ্তরের
কৃষিতে সেচের জন্য লাগাতার ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ায় আর্সেনিকের বিপদ বাড়ছে। ফলে সেই বিপদের হাতছানি রুখতে এবার রাজ্যের আর্সেনিক কবলিত ১০টি জেলায় বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করছে কৃষিদপ্তর। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম,হুগলি,নদীয়া,হাওড়া,পূর্ব বর্ধমান,পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহ ও উত্তর ২৪ পরগনায় নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে। এই জেলাগুলির বিভিন্ন ব্লকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুকুর সংস্কার করে সেখানে ধরে রাখা হবে বৃষ্টির জল। সেই জল যাতে নেমে বা বেরিয়ে না যায়, সেজন্য বাঁধানো হবে পুকুরের পাড় ও তলদেশ। পুকুর থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল নিয়ে যাওয়া হবে কৃষকের জমিতে। এজন্য পুকুরে বসানো হবে বিশেষ মেশিন। জলের অপচয় বন্ধ হবে এতে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য ২০ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। একটি ব্লকে একাধিক প্রকল্পও করা যাবে। ১০টি জেলার যে সব ব্লক আর্সেনিকপ্রবণ, সেখানে মিলবে এই প্রকল্পের সুবিধা।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন,১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে পুকুর সংস্কার করা হয়। কিন্তু তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হয় না। নিয়ম মেনে মাটি না কাটায় অনেক সময় পাড় ভেঙে জল বেরিয়ে যায়। কিন্তু এই প্রকল্পে পুকুর খনন করা হবে পরিকল্পনামাফিক। জলাশয় কতটা গভীর হবে, কীভাবে পাড় বাঁধানো হবে, সবটাই জানিয়ে দেওয়া হবে জেলাগুলিকে। পুকুর থেকে কৃষকের জমিতে জল দেওয়ার জন্য বিশেষ মেশিন দেওয়া হবে চাষিদের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় আর্সেনিকের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। মুর্শিদাবাদের ভরতপুর বাদ দিয়ে সব ব্লকই আর্সেনিকপ্রবণ। বীরভূমের মুরারই, নলহাটি, রাজনগরের মতো বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিকের আধিক্য রয়েছে। ওই জেলাগুলিতে গরমকালে সাব মার্সিবল পাম্পের সাহায্যে দেদার ভূগর্ভস্থ জল তোলা হয়। ফলে আর্সেনিকের প্রবণতা আরও বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাটির নীচ থেকে লাগাতার জল তোলার ফলে জমির ধানেও আর্সেনিকের মাত্রা বেড়েছে। যা যথেষ্টই উদ্বেগের। আধিকারিকদের দাবি, ভূগর্ভস্থ জল তোলা বন্ধ হলে আর্সেনিকের মাত্রা কমবে। সে কারণে এই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। নাবার্ড এই প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। ‘মাইক্রো ইরিগেশন’ ফান্ডের মাধ্যমে পুরনো পুকুরও সংস্কার করে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে। জেলাগুলিকে পুকুর চিহ্নিত করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা আশিস বাড়ুই বলেন, এই প্রকল্পে চাষিরা উপকৃত হবেন। রবি মরশুমে চাষের সুবিধা হবে। এই পদ্ধতিতে জলের অপচয় অনেক কম হবে। অনেক সময় দেখা যায়, পুকুরে গরমকালে জল থাকে না। ফলে চাষের অসুবিধা হয়। চাষিরা সাব মার্সিবল চালাতে বাধ্য হন। বিকল্প সেচের ব্যবস্থা হলে তাঁরা তা করবেন না। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মধ্যে মুর্শিদাবাদে সাব মার্সিবলের সংখ্যা অনেক বেশি। কান্দি মহকুমার অধিকাংশ পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর সাব মার্সিবল রয়েছে। অথচ এই জেলাতেই আর্সেনিকের ছোবল সবচেয়ে বেশি। তাই এই জেলায় বিকল্প সেচের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।