কাটছে না ঘোর, ভোটে ভরাডুবির পরেও কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সেই সোনিয়াই!
দলের পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধীই কংগ্রেস সভানেত্রী থাকছেন। তাঁর নেতৃত্বেই দল আগামীদিনে আরও ব্যাপকভাবে বিজেপি বিরোধী কর্মসূচিতে নামবে। কিন্তু তাতেই কি ঘুরে দাঁড়াবে দল? রবিবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও দিশা খুঁজে পাওয়া গেল না। সেই কারণেই শীঘ্রই একটি ‘চিন্তন শিবিরে’র আয়োজন করা হচ্ছে। সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্যায় শেষ হওয়ার পরেই ওই চিন্তন শিবির হবে। ফের ডাকা হবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও।
পাঁচ রাজ্যে দলের ভরাডুবি যে অত্যন্ত চিন্তার বিষয়, তা এদিন বৈঠকে প্রায় প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন। বৈঠকের পর দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে দলের স্ট্র্যাটেজি কাজ করেনি। পাঞ্জাবে মুখ্যমন্ত্রী বদলেও লাভ হয়নি। আগামী দিনে আরও গভীরে গিয়ে মোদী বিরোধী কর্মসূচি নিতে হবে বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুরজেওয়ালা বলেন, সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বেই দল এগিয়ে চলবে। সভাপতি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাঁকেই সংগঠনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতেও বলা হয়েছে। আগামী ২০ আগস্ট সাংগঠনিক নির্বাচন হওয়ার কথা।
পাঞ্জাবে সরকার তো বটেই, সব মিলিয়ে পাঁচ রাজ্যে ছিল দলের মোট ১৪০ জন বিধায়ক। কিন্তু গত ১০ মার্চ ফল বেরতেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। পাঞ্জাব হাতছাড়া হয়েছে। তারই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মণিপুর মিলিয়ে মোট বিধায়ক সংখ্যা কমে হয়েছে ৫৫। কেন এমন হাল হল, তা নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এদিন এ কে অ্যান্টনি উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কোভিড আক্রান্ত। আসেননি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও। বৈঠকে হাজির ছিলেন রাহুল গান্ধী, পি চিদম্বরম, মল্লিকার্জুন খাড়গে, পবন বনসল, গুলাম নবি আজাদ, অধীররঞ্জন চৌধুরী, হরিশ রাওয়াত, কে সি বেণুগোপাল প্রমুখ। খোলামনেই প্রত্যেকে পাঁচ রাজ্যের ভোটের পরাজয় নিয়ে যেমন আলোচনা করেছেন, একইসঙ্গে শীঘ্রই কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচন নিয়েও চর্চা হয়েছে। এবং সেখানেই রাহুল গান্ধীকে ফের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন অধিকাংশ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। গান্ধী পরিবারকে সরিয়ে অন্য কাউকে সভাপতি করা হলে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে বলে যেমন দলের একাংশের মত। তেমনি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, কর্ণাটকের দাপুটে নেতা ডি কে শিবকুমারের মতো নেতাদের মতে, গান্ধী পরিবারছাড়া দল চলবে না। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রাহুল গান্ধী সভাপতি হওয়ার পর রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য জয় করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে না পেরে ইস্তফা দেন সোনিয়া-পুত্র। সেই থেকে দল চলছে অসুস্থ সোনিয়াকে সামনে রেখেই। অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হিসেবে সোনিয়া গান্ধী দায়িত্ব নিয়েছেন বটে, তবে পূর্ণ সভাপতি ছাড়া কংগ্রেসের মতো দল কী করে চলতে পারে? উঠতে শুরু করে এই প্রশ্ন। সেই কারণেই দলীয় সভাপতি নির্বাচন এগিয়ে আনার ভাবনাচিন্তা চলছে। একইসঙ্গে গুঞ্জন চলছে, রাহুলই কি ফের সভাপতি। ছবি: পিটিআই