মন্দিরেও আমিষ ভোগ! হ্যাঁ, ঐতিহ্যের বাংলায় এও সম্ভব
সৌভিক রাজ
ঈশ্বরের জন্য নিবেদন করা দেবার্ঘ্য বলতেই আমাদের মনে পড়ে ফল-ফলাদি, মিষ্টি, নিরামিষ ভোগের কথা। কিন্তু আদপে কী তাই? যে সনাতন ধর্মে প্রাণী বলি প্রচলন ছিল সেখানে কী আমিষ ভোগ চলেই না! কিন্তু পুজোর মাছ তো আমাদের লোকাচারে মিশেছে দশমীতে ইলিশ হোক বা সরস্বতী পুজোয় জোড়া ইলিশ। বিয়েতেও মাছ অন্যতম। কী বলছে শক্ত ধর্মমত? ঈশ্বরের জন্য নিবেদিত মাংসকেই সাদরে গ্রহণ করেছিলেন অভিজাত শাস্ত্রীয় হিন্দুরা। বলি ছাড়া অন্য মাংস ছিল বৃথা মাংস। কালের নিয়মে অধিকাংশ মন্দিরেই বন্ধ হয়েছে বলি। আজও আমিষ ভোগ রয়ে গিয়েছে বাংলায়। মূলত কালী মন্দির গুলোতেই এখনও আমিষ ভোগ দেওয়া হয়।
কোন কোন মন্দিরে দেবার্ঘ্য হিসেবে আজও চলে আমিষ ভোগ খুঁজলো দৃষ্টিভঙ্গি :
১) তারাপীঠ
বাংলার অন্যতম বিখ্যাত কালীক্ষেত্র হল তারাপীঠ। সেখানে আজও দেবীর ভোগে মাছের মাথা নিবেদন করা হয়। নিত্য ভোগে মাছেও মাথাও দেওয়া হয় দেবীকে। বিশেষ করে কৌশিকী অমাবস্যায় মাছ মাংস সহযোগে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। এছাড়াও মাকে শোল পোড়া নিবেদন করা হয়।
২) কালীঘাট
কলকাতার অন্যতম প্রাচীন কালীক্ষেত্র কালীঘাট। এখানে দেবী কালিকার ভোগে মাছের কালিয়া এবং পাঠার মাংস নিবেদন করা হয়। দেবীর ভোগে আঁশ যুক্ত মাছ, কাতলা মাছ, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, চুনো মাছের টক নিবেদন করা হয়।
৩) বেহালা সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির
৩৫০বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে মহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় দীপান্বিতা কালীপুজো। ওইদিন মাকে আমিষভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে খিচুড়ি, পাঁচরকম ভাজা, লাবড়া, আলুর দম, নানা সবজির তরকারি, মাছ, মাংস, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি।
৪) কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির
কালনা শহরকে কালীময় বললে অত্যুক্তি হবে না। শহরজুড়ে রয়েছে অজস্র কালী মন্দির। তার মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির অন্যতম। দেবী অম্বিকা সিদ্ধেশ্বরীর বাৎসরিক পুজো হয় কালী পুজোর সময় দীপান্বিতা অমাবস্যায়। এছাড়াও পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, বিপদতারিনী ব্রত, শিবরাত্রি, দুর্গাপুজোর চারদিন, শনি ও মঙ্গলবার এবং অমাবস্যায় তিলধারণের জায়গা থাকে না মন্দিরে। দেবীর নিত্যদিন অন্নভোগ দেওয়া হয়। এখানে অন্নের সঙ্গে প্রতিদিন মাছ ভোগ দেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক পুজোয় চিংড়ি এবং ইলিশমাছ ভোগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
৫) কোয়ালপাড়া মঠ
মা সারদা ঠাকুর রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে কোয়ালপাড়ায় মঠ গড়ে তোলেন। এই মঠে আজও জ্যান্ত মাছ ভোগ দেওয়া হয়। ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে সেই মাছ বিতরণও করা হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রিয় ছিল জিওল মাছ। ঠাকুরের প্রিয় জিনিসটিকে আজও মনে রেখে জিওল মাছ ভোগে দেওয়ার রীতিটি বজায় রেখেছে কোয়ালপাড়া আশ্রম।