বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

কীভাবে ঘটানো হয় কৃত্রিম বৃষ্টিপাত? আজ জলদিবসে জেনে নিন কৃত্রিম বৃষ্টির কথা

March 22, 2022 | 5 min read

সৌভিক রাজ

সভ্যতা যত এগিয়েছে, বিজ্ঞানমনস্কতা তত বেড়েছে। মানুষ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে এই পৃথিবী ও প্রকৃতিকে। প্রকৃতির উপর মানুষের এই নিয়ন্ত্রণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক; দুই প্রকার প্রভাবই রয়েছে। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হল তেমনই একটি ঘটনা যেখানে বিজ্ঞানের সাহায্যে কৃত্রিম ভাবে ইচ্ছানুযায়ী এবং পছন্দ মতো জায়গায় বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। একটি সম্পূর্ণ রসায়নের কল্যানেই সংঘটিত হয়।

এ জন্য প্রথমত মেঘ সৃষ্টি করতে হয়; দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মেঘকে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে হয়। তৃতীয়ত, মেঘের জল ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে এনে বৃষ্টি ঘটানো হয়। তবে মেঘ সৃষ্টি করে আর বৃষ্টিপাত ঘটানো হয় না বরং, আকাশের ভাসমান মেঘ-এর জল ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে বা মেঘে জল জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকলে রাসায়নিক প্রয়োগ করে জলের ফোঁটায় পরিণত করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। প্রায়ই আকাশে এমন অবস্থা দেখা যায় যে, আকাশে মেঘ আছে অথচ বৃষ্টি হচ্ছে না। অতি শীতল মেঘে জল জমে বরফ কণায় পরিণত হয়। তখন বিমান থেকে রাসায়নিক ছিটিয়ে মেঘের মধ্যে জমে থাকা জল বা বরফ কণার অতি শীতল অবস্থা নষ্ট করে দেওয়া হয়; তখনই বরফ জলকনায় পরিণত হয় জল। মেঘ জল ধারণ ক্ষমতা হারায় এবং মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটায় মাটিতে ঝরে পড়ে।



কৃত্রিম বৃষ্টি তিনটি পর্যায়ে সম্পূর্ণ হয়, প্রথমেই প্রয়োজন​ বাতাসের ঘনীভবন

যেখানে বৃষ্টিপাত ঘটানো প্রয়োজন সেখানে রাসায়নিক ব্যবহার করে মেঘ সৃষ্টি করা হয়। ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ইউরিয়া অথবা ইউরিয়ার সঙ্গে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মিশিয়ে রাসায়নিক প্রস্তুত করা হয় এবং ​মেঘ সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক বায়ু থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু করে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে হল মেঘ সৃষ্টি

কৃত্রিমভাবে; রাসায়নিকের সাহায্যে মেঘপুঞ্জ তৈরি করা হয়। উক্ত প্রক্রিয়ায় সাধারণ রান্নার নুন বা সোডিয়াম কেলারাইড, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, শুকেনো বরফ এবং কখনো কখনো ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এতে ঘনীভবন দ্রুত হয় এবং মেঘ সৃষ্টি হয়।

তৃতীয় ধাপে ঘটানো হয় বৃষ্টিপাত

এক্ষেত্রে যেখানে বৃষ্টিপাত ঘটাতে হবে,​ ​বিমানের সাহায্যে ঐ মেঘের ওপর সিলভার আয়োডাইড অথবা কখনও কখনও শুস্ক​ বরফ ছড়িয়ে দিয়ে সম্পৃক্ত মেঘের আর্দ্রতাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। জলকনায় পরিণত করা হয় যা মূলত মেঘের ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বাতাসে আর ভেসে থাকতে না পেরে মাটিতে ঝরে পড়তে শুরু করে। যার ফলে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়​​।

১৮৯১ সালে লুই গাথমান সর্ব প্রথম তরল কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের পরিকল্পনা করেন। গত শতকের তিনের দশকে বার্গারন-ফাইন্ডিসেন বরফের স্ফটিক কণার উপস্থিতিতে অতি শীতল জল কণায় পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি সংঘটিত হয়- এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে বৃষ্টিপাতের​ তত্ত্ব তৈরি করেন। এই তত্ত্বকে গবেষক ভিনসেন্ট শিফার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ সালে ভিনসেন্ট শিফার সর্বপ্রথম কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মূলনীতি আবিষ্ক​ করেন এবং ওই বছরই ১৩ই নভেম্বর নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আরভিং ​ল্যাংমুর-এর সঙ্গে যৌথভাবে পরীক্ষামূলক ভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সফল হন। এই কৃত্রিম বৃষ্টিপাতকে ঘটানোর পদ্ধতিকেই বলা হয় ক্লাউড সিডিং।

ক্লাউড সিডিং কি ?​

এভাবে রাসায়নিক ছিটিয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ক্লাউড সিডিং। মূলত রেফ্রিজারেটরের মূলনীতি ব্যবহার করেই (ক্লাউড সিডিং) কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলোর বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য মেঘ গুলির ঘনীভবন ঘটা আবশ্যক​। এই ঘনীভবনের জন্যে ব্যবহার করা শুষ্ক বরফ অথবা সিলভার আয়োডাইড। শুষ্ক বরফের ​তাপমাত্রা মাইনাস (-)৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে ভেসে থাকা মেঘের উপর এই শুষ্ক বরফ ছড়িয়ে দিলেই সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে।

শুষ্ক বরফ বিমানে বা রকেটে করে, মেঘের উপর শুষ্ক বরফ বা রাসায়নিক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান আমলে মিসাইলের ​​মাধ্যমে রাসায়নিক ছাড়ানোর প্রক্রিয়াই সবচেয়ে জনপ্রয়। ​

ট্রপোস্ফিয়ারে থাকা মেঘগুলো যত উপরে উঠতে থাকে, তাদের তাপমাত্রাও তত কমতে থাকে, কারণ ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে।

যখন মেঘগুলোর তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশী থাকে, তখন এদেরকে বলা হয় “উষ্ণ মেঘ” এবং যখন এদের তাপমাত্রা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কম থাকে তখন এদের বলা হয় “শীতল মেঘ”।

উষ্ণ মেঘের ক্ষেত্রে ছোট ছোট জলের বিন্দুগুলো একে অপরের সাথে সংঘৰ্ষ বিক্রিয়ায় ধাক্কা লাগার ফলে, ​​আকৃতিতে কিছুটা বড় হতে থাকে এবং এই বড় আকৃতির জন্য এরা মেঘের ধারণক্ষমতার সীমা পেরিয়ে যায় এবং ​মাটিতে এসে পড়ে যেটাকে আমরা আসলে বৃষ্টি বলে থাকি।

শীতল মেঘের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ঘটনা ঘটে থাকে। সেখানে ছোট ছোট বরফের কণা ​গুলো বড় হতে থাকে। যখনই এই ছোট ছোট বরফ কণা ​গুলোর তাপমাত্রা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশী হয়, তখন সেগুলো গলে গিয়ে জলের ফোঁটা হিসেবে পড়তে থাকে।

এই বার রাসায়নিক ব্যবহার করে কোনোভাবে ছোট ছোট জলের বিন্দু বা বরফ কণা গুলোকে কৃত্রিমভাবে ভারী করে দেওয়া যায়, তাহলেই কিস্তিমাত! কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে আর কোনো বাধাই থাকে না!

কীভাবে করা হয় এই ক্লাউড সিডিং?

ক্লাউড সিডিং-এর একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। মূলত ​বিমানের মাধ্যমে মেঘের উপরে হাইগ্রোস্কোপিক পাউডার বা জল স্প্রে করা। কিন্ত সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় পদ্ধতিটি হলো শুষ্ক বরফ অর্থাৎ কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড বা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করা।

এই ক্লাউড সিডিং সাধারণত তিন রকমের হয়ে থাকে। যথা :

স্ট্যাটিক ​ক্লাউড সিডিং: এখানে সিলভার আয়োডাইড মেঘে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মেঘে থাকা জলের অণুগুলোকে ঘনীভূত করা হয় এবং এইভাবেই বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়।

All you Need to Know about Cloud Seeding - The New Ecologist

ডায়নামিক ক্লা​উড সিডিং: এই পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্যে, ​বাতাসের বেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মেঘের মধ্য দিয়ে বেশী পরিমানে জলীয়বাষ্প পূর্ণ বায়ু অথবা জলীয় ​অণুর প্রবাহ ঘটানো হয়। এই পদ্ধতিটি স্ট্যাটিক ক্লাউড সিডিং এর চেয়ে বেশ জটিল।

হাইগ্রোস্কোপিক ক্লাউড সিডিং: এই পদ্ধতিতে মেঘের নিচের অংশে সোডিয়াম ক্লোরাইড ছিটিয়ে দেয়া হয়। জলের অণুগুলো সোডিয়াম ক্লোরাইডের সাথে মিশে গেলে আস্তে আস্তে বড় এবং ভারী হতে থাকে, ফলে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।

ক্লাউড সিডিং-এর ব্যবহার এবং এর সুফল ও কুফল :​

Cloud seeding: How the UAE is enhancing rainfall through technology - News  | Khaleej Times

পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে চীনই সর্বাধিকবার কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে। ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিক চলাকালীন প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা। চীনের বিজ্ঞানীরা অলিম্পিক শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগেই প্রচুর কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে সেই সম্ভবনা নস্যাত​ করে দিয়েছিলেন। ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে বৃষ্টি সংঘটিত করেছিলো চীন, কারণ যাতে করে পুরো আয়োজন বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত না হয়। 

কোনো একটি এলাকায় কৃত্রিম বৃষ্টির মাধ্যমে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০%-২০% বাড়ানো সম্ভব। খরাপ্রবণ এলাকায় ফসল ফলাতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত খুবই কার্যকর। বর্তমানে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভারী বৃষ্টিপাত ও হারিকেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ঘূর্ণিঝড় এলাকায় প্রচুর মেঘ থাকে, থাকে নিম্নচাপও। এমন অবস্থায় সেখানকার ঘূর্ণিঝড়ের মেঘে ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি খর্ব করে ফেলা যায়। সম্প্রতি এই পথ অবলম্বন করছে ইন্দোনেশিয়া।

ইন্দো​নেশিয়ার​ জাকার্তায় এই বছরের জানুয়ারীতে প্রবল ক্রমাগত বৃটিপাতের ফলে প্রথম তিনদিনেই প্রাণ হারায় ৪৩ জন মানুষ৷ আবহাওয়াবিদরা সম্ভবনার কথা বলেন যে,পরবর্তী​ দু’সপ্তাহ চলবে এই বৃষ্টিপাত। পরে বিজ্ঞানীরা মেঘগুলো জাকার্তায় পৌঁছানোর আগেই নদীর উপর কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে শতশত মানুষের প্রাণ রক্ষা করেন এবং এক ভয়াবহ বন্যাকে কার্যত রুখে দেন।
কিন্তু এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে প্রচুর ! প্রথমত পরিবেশের উপর এই নিয়ন্ত্রণ কখনই সমীচীন নয়।

প্রতিটি মেঘের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্টি জায়গায় বৃষ্টিপাত ঘটানোর কথা, কিন্তু তার আগেই বৃষ্টিপাত ঘটানোর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। খরার সম্ভবনা বেড়ে যাচ্ছে। সময়ে আগে বাধ্য হয়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইচ্ছা করে এই বৃষ্টিপাত কিন্তু কৃষি কাজের সমূহ ক্ষতি করছে।
​ ​ ​
যেমন বর্তমানে চীন অতিমাত্রায় কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে​​। সেই কারণেই চীনের প্রতিবেশী দেশ গুলির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ভারতেও কৃত্রিম বৃষ্টি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ভারত অবশ্য চীনকে বৃষ্টিচোর বলে এবং চীন সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের জলবায়ুর চরিত্র কিন্তু বদলে গিয়েছে। ওই সব এলাকা খরা প্রবন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এমনিও ​​ভারতে খরা বৃদ্ধির কয়েকটা কারণের মধ্যে চীনের অধিক কৃত্রিম বৃষ্টিপাতকেও দায়ী করা হয়।

সেই সঙ্গে এও বলতে হয়,​ ক্লাউড সিডিং বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ঘটানো হচ্ছে। এই প্রযুক্তি প্রভূত ব্যয়বহুল৷ এইজন্য বিজ্ঞানীরা লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টিপাত ঘটানোর প্রক্রিয়া আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। 

চীন, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইসরায়েল, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়া, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার মালি, নাইজার, মরক্কো, বুরকিনা ফাসো এবং সেনেগাল প্রভৃতি দেশগুলিতে বর্তমানে প্রায় নিয়মিতই ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে।

কিন্তু শেষ হইয়েই হইলো না শেষ… কৃত্রিম জিনিসটা কৃত্রিম কারণ সে প্রাকৃতিক নয় ! আর তাতেই বিপদ মানব সভ্যতার। প্রকৃতি পরিবেশ প্রাণ সৃষ্টি করেছে, তাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করএ যায় না। করলেই হিতে বিপরীতই হবে। যদিও ভালো কাজে দু-এক বার করা​ ​​যেতে পারে কিন্তু নিয়মিত করতে গেলেই অশনি সংকেত হয়ে দেখা দেবে সে নিয়ন্ত্রণ!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#World Water Day, #Artificial Rain

আরো দেখুন