প্রয়াত অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের সেরা সিনেমাগুলি ফিরে দেখা
বিনোদনের জগতে ফের নক্ষত্রপতন। প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিনোদন জগত।
লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন। এই ছিল অভিনেতার জীবন। আর সেই শুটিং ফ্লোরেই চিরবিদায়। এই বিদায়বেলায় ফিরে দেখা যাক প্রয়াত অভিনেতার কিছু অনন্য কাজ।
সিনেমা জগত থেকে ক্ষনিক বিরতি নিলেও ফিরে এসেছিলেন ধারাবাহিকের হাত ধরে। সেখানেও চুটিয়ে কাজ করছিলেন। দীর্ঘ ৩৪ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি বাংলা বিনোদন জগতকে উপহার দিয়েছেন একের পর এক অসাধারণ সিনেমা। রইল তারই কিছু উদাহরণঃ
দহন (১৯৯৭)
ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত, দহন একটি ডিস্টোপিয়ান সিনেমা। সিনেমাটি সিনেমা মহলে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়। রোমিতার গল্প, যাকে তার স্বামীর সামনে রাস্তায় শ্লীলতাহানি করা হয়। একজন স্কুল শিক্ষিকা ঝিনুক তাকে সাহায্য করে। পরে রাগের মাথায় রমিতার স্বামী পলাশও তাকে ধর্ষণ করে। ফলে রোমিতা তার বাপের বাড়ি ফিরে যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সে শ্লীলতাহানিকারীদের বিরুদ্ধে মামলায় হেরে যান। রোমিতা কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে তা নিয়েই গল্পের বাকি অংশ। এই জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী ছবিতে রোমিতার স্বামী পলাশ চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
বাড়িওয়ালী (২০০০)
বাড়িওয়ালী ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত একটি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি। একটি হতভাগ্য, মধ্যবয়সী মহিলা বনলতার গল্প, যার স্বামী বিয়ের আগের রাতে মারা যায়। এরপর থেকে সে বাড়িতে একা থাকে। তিনি এক চলচ্চিত্র কুশলীকে তার বাড়িতে তাদের সিনেমার শুটিং করতে অনুমতি দেন এবং চলচ্চিত্রের পরিচালকের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। এই ছবিতে অভিজিৎ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
আলো (২০০৩)
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করেন তরুণ মজুমদার। একটি মেয়ে আলো, তার গল্প নিয়েই তৈরি এই সিনেমা। শহরে বেড়ে ওঠা এক মহিলা যে কিনা ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পরই গ্রামে বিয়ে করেছিল। কীভাবে সেই পরিবেশে মানিয়ে নেয় আলো, সেটাই সিনেমার গল্প। অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ছবিটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তার অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন।
মিষ্টি ছেলের দুষ্টু বুদ্ধি (২০১৩)
তিন চোরের গল্প বল। বাড়ির সদস্যদের অনুপস্থিতিতে কালীচরণ এবং তার দুই সাগরেত একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে যায়। কিন্তু তাদের এটা জানা ছিল না যে বাড়ির মালিক ও তার নাতি সেখানে উপস্থিত আছে। তারপর যা ঘটে তা নিয়েই গল্প। কালীচরণ চরিত্রে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় অসাধারন।
সংঘর্ষ (১৯৯৫)
সংঘর্ষ একটি গ্রামের গল্প। ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্র রয়েছে। একজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ এবং অন্যজন ডাক্তার। তারা সবসময় গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং একে অপরকে হারাতে ব্যস্ত থাকে। অভিষেক চট্টোপাধ্যায় তার চরিত্রে দুর্দান্ত মানানসই।
ফিরিয়ে দাও (১৯৯৪)
অর্জুন নামে এক ব্যক্তির প্রতিশোধের গল্প, যে তার চোখের সামনে তার বাবা এবং বোনের হত্যা হতে দেখেছে। এই আঘাতের কারণে তার মায়ের পক্ষাঘাত হয়। সে প্রতিশোধ নিতে মার্শাল আর্টে প্রশিক্ষণ নেয়। অভির ভূমিকায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
মধুর মিলন (২০০০)
মধুর মিলন সুনিতা ও গোপালের চরিত্রে বাবুজি ও ফুলমতির পুনর্জন্মের গল্প। সামাজিক মর্যাদার তারতম্যের কারণে বিয়ে করতে না পেরে বাবুজি ও ফুলমতি আত্মঘাতী হয়েছিল। এই জীবনে সুনিতা এবং গোপাল রূপে পুনর্জন্ম লাভ করে, তারা আবার একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
মায়ের আঁচল (২০০৩)
মায়ের আঁচল অনুপ সেনগুপ্ত পরিচালিত ছবি। ভোলা ও রূপার গল্প। ভোলার বাবা রূপার বাবাকে বলে যে ভোলা একটি ধনী পরিবার থেকে নেওয়া তার দত্তক পুত্র এবং এই কারণেই তিনি রূপার সাথে ভোলার বিয়ের অনুমতি দিতে পারবেন না। ভোলা তখন গ্রাম থেকে কলকাতায় তার আসল বাবার কাছে যায়। এই ব্লকবাস্টার সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
অর্জুন আমার নাম (২০০৩)
অর্জুন একজন গ্রামের ছেলে। বাবাকে হারিয়ে সে এবং তার মা মামাদের সাথে থাকে। অর্জুন একজন সহৃদয় ব্যক্তি। গ্রামের ধনী লোকদের রোষের মুখে পড়ে। গ্রামের ছেলের চরিত্রে অভিষেক চট্টোপাধ্যায় তার অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন।
পথভোলা (১৯৮৬)
অভিষেক চট্টোপাধ্যায় অভিনীত প্রথম সিনেমা। বর্ষীয়ান অভিনেতা উৎপল দত্তের সাথে অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। এই ছবিটিই তাঁর ‘ফিল্ম ক্যারিয়ার’- এ অন্য মাত্রা এনে দেয়।