বাংলায় গ্রামীণ উন্নয়নের বঞ্চনা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায়
বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নতুন নয়। কিন্তু গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই বঞ্চনার পরিধি যে আরও বাড়ছে, তার ফিরিস্তি তুলে ধরে বিজেপিকে বিঁধলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায়। বুধবার বিধানসভায় দপ্তরের বাজেট নিয়ে আলোচনার শেষে জবাবি ভাষণে এব্যাপারে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। পুলকবাবু জানালেন, ১০০ দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনা—একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না।
আসলে বিজেপি বাংলা বিরোধী। তাই তাদের এই আচরণ। প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য পঞ্চায়েত দপ্তরের জন্য ২৫ হাজার ১৭০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দপ্তরের এই বাজেট পেশের পর্বে এদিন মন্ত্রী, বিধায়কদের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। ২০১১ সালের পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে গ্রামীণ বাংলায় কীভাবে উন্নয়ন হয়েছে, তার তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়করা। এদিন বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় বিজেপির কোনও বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন না। পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানান, তৃণমূল জমানায় এপর্যন্ত রাজ্যে সাকুল্যে এক লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। যা বাম আমলের মোট পরিমাণের তিন গুণ। চলতি অর্থবর্ষে গ্রামীণ সড়ক যোজনায় এখনও পর্যন্ত ৩৬ হাজার ২৫৯ কিলোমিটার সম্পূর্ণ নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে।
আবাস যোজনায় কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক সংস্থানের অনুপাত ৬০ : ৪০। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য ৫৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৮৩টি পরিবার রেজিস্ট্রেশন করেছে। তারমধ্যে ৩৮ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবারের জব কার্ড ম্যাপিং হয়েছে। ফলে এই সকল পরিবারই আবাস যোজনায় প্রকল্পে বাড়ির অনুমোদন পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু পঞ্চায়েতমন্ত্রীর অভিযোগ, এই খাতে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা পাবে রাজ্য। উত্তপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড সহ ২৩টি রাজ্যকে অনুমোদন দেওয়া হলেও বাংলাকে কোনও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না।
১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ২০২২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত কেন্দ্র একটি টাকাও পরিষোধ করেনি। এক্ষেত্রে প্রায় ১৬১৩ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা কেন্দ্রের কাছে পাবে রাজ্য। এছাড়াও মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কেন্দ্রের সরকার ৬৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিলেও, একটি টাকাও রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হয়নি। এদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে জবাবি ভাষণে অংশ নেন দপ্তরের দুই রাষ্ট্রমন্ত্রী বেচারাম মান্না ও শিউলি সাহাও।
ওদিকে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের জন্য ৩ হাজার ৮৭৭ কোটি ৭০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার বরাদ্দও অনুমোদিত হয় বিধানসভায়। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ পরিবারের বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে দপ্তর। এখনও পর্যন্ত ৩৭ লক্ষ ২২ হাজার পরিবারের বাড়িতে জল পৌঁছে দিয়েছে তারা। দপ্তরের মন্ত্রী পুলকবাবুর বক্তব্য, চলতি অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশ মাত্র ৬ লক্ষ বাড়িতে জল পৌঁছে দিয়েছে। সেখানে বাংলার সরকার পৌঁছেছে ২২ লক্ষের
বেশি বাড়িতে।