প্রতিশ্রুতি সার, প্রধানমন্ত্রী মোদীর শংসাপত্র দেখিয়েও মিলছে না চাকরি
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাধের প্রকল্পের শংসাপত্র। তারপরও মিলছে না চাকরি। কোভিড পরবর্তী সময়ে বেকারত্বের জালে বাঁধা পড়া দেশবাসীর কাছে নতুন হতাশার কারণ হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা বা স্কিল ডেভেলপমেন্ট। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রক যুবক-যুবতীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, বারবার গ্যারান্টি দিচ্ছে—এতে চাকরি হবেই। কিন্তু সিংহভাগ ক্ষেত্রেই সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পাচ্ছে না।
গত বছর নীতি আয়োগের একটি রিপোর্ট ফাঁস হয়েছিল। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ৪৫ বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে বেকারত্ব। বস্তুত করোনাকালের আগে থেকেই দু’টি বিষয় নিয়ে জেরবার মোদি সরকার—অর্থনীতির মন্দা এবং কর্মসংস্থান। বাড়তে থাকা বেকারত্ব নিয়ে তাবৎ সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী বারবার একটি প্রকল্পেরই উল্লেখ করেছেন—প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা। এই প্রকল্পে প্রতি বছর কর্মপ্রার্থী যুবসমাজকে নানাবিধ কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর তাঁরা পেয়ে থাকেন সার্টিফিকেট। সেই শংসাপত্রেই প্রমাণ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা বিভিন্ন সেক্টরে কাজে যোগ দেওয়ার যোগ্য। কিন্তু সরকারি রিপোর্টই বলছে, বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করতে এই প্রকল্প চরম ব্যর্থ। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, এই প্রকল্পের ব্যর্থতার কারণ কী? ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি এই প্রকল্পের তৃতীয় পর্বের কাজ শুরু হয়েছিল। অর্থবরাদ্দ হয়েছিল ৯৪৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল, ২০২১ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ৮ লক্ষ কর্মপ্রার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যায়, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়। সেই কারণে সময়সীমা বাড়িয়ে গোটা ২০২১ আর্থিক বর্ষকেই টার্গেট করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শর্ট টার্ম ট্রেনিং (এসটিটি) কোর্সে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৩৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭৫ হাজার ১৯৪ জনকে। আবার যাঁরা সার্টিফিকেট পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চাকরি জুটেছেন কতজনের? মাত্র ১৫ হাজার ৪২১। জানুয়ারি পর্যন্ত রেকগনিশন অব প্রায়র লার্নিং (আরপিএল) ক্যাটিগরিতে ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার কর্মপ্রার্থীকে ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, এঁদের সিংহভাগের নির্দিষ্ট স্কিল আগে থেকেই রয়েছে। এই সার্টিফিকেট তার প্রমাণপত্র। পরবর্তী ধাপ, এসটিটি সার্টিফিকেট, যা সরাসরি কর্মস্থানের সঙ্গে যুক্ত। এই এসটিটি নিয়েই কেন্দ্র এবং স্ট্যান্ডিং কমিটি—উভয়েই উদ্বিগ্ন। কারণ, যথেষ্ট সাফল্য আসছে না। কিছু ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট প্রাপ্তদের কর্মসংস্থানের হার মাত্র ২০ শতাংশ। কয়েকটি সেক্টরে আরও কম—১২ শতাংশ। স্ট্যান্ডিং কমিটিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, করোনার ধাক্কা সামলে তথ্য-প্রযুক্তি এবং অন্য উৎপাদন শিল্প এখনও পুরোদমে নিয়োগ করতে পারছে না। সেই কারণেই সমস্যা। সরকার জানিয়েছে, গত দু’মাসের হিসেব এখনও আসেনি। অর্থনৈতিক মন্দা কেটে যাচ্ছে, এবার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলেই আশা।
যদিও সরকারের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক স্বনিযুক্তিকেই নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বৃহস্পতিবার লোকসভায় জানিয়েছেন, ‘বিশ্বের মধ্যে স্টার্ট আপ বাণিজ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে। সরকারের তালিকায় এসেছে ৬৫ হাজার স্টার্ট আপ।’ আর স্টার্ট আপের অর্থ কী? বেসরকারিভাবে নিজেদের উদ্যোগে নতুন ব্যবসা অথবা শিল্পস্থাপন।