পেটপুজো বিভাগে ফিরে যান

আজ বিশ্ব শাক দিবসে জেনে নিন ‘রাজকীয় শাকের’ ইতিহাস

March 26, 2022 | 2 min read

ছবি সংগৃহীত

যতই সস্তার ঝুড়িতে শাক থাকুক না কেন, এর জন্ম কিন্তু বিদেশে। কিন্তু কোথায়? ইতালি, ফ্রান্স হয়ে শাকম্ভরী দুর্গা, দুনিয়াজোড়া শাক সংবাদে নন্দিনী।


শাকের কাজ কী? প্রশ্নটা করুন। আশি শতাংশ বাঙালি বলবে, মাছ ঢাকা। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা অতি জনপ্রিয় এক বাঙালি প্রবাদ। আপাত নিরীহ, নিরামিষ, তুচ্ছ এক জিনিসের আড়ালে চাপা দিয়ে রাখা দুর্মূল্য কোনও বিষয় বা বস্তুর কথা বোঝাতে ব্যবহার করা হয় এই প্রবাদ। তবে এমনতরো প্রবাদের দৌলতেই কিনা জানা নেই, শাক জিনিসটাকে তাচ্ছিল্য করার রীতি অতি পুরোনো। শাকপাতা মানেই গোরু কিংবা গরিব মানুষ। এর বাইরে তার আর নিজস্ব কোনও মর্যাদা নেই। কিন্তু শাক বিষয়টার সঙ্গে যে রাজারাজড়ার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, সে কথাটা মানেন? কিংবা জানেন? ওই দেখুন, শুনেই চমকাচ্ছেন যে! তুচ্ছ শাকও কিনা এত রাজকীয়?


শাকের আজ যতই অধঃপতন হোক না কেন, এই সবুজ পাতাগুলো একসময় ধনীদের রান্নাঘরে শোভা পেত, সে সাক্ষ্য দিচ্ছে ইতিহাস। ষোড়শ শতাব্দীতে ফরাসি সম্রাট দ্বিতীয় হেনরিকে বিয়ে করার পর রানি ক্যাথরিন দি মেদিচি শাক নিয়ে আসেন ইতালি থেকে। ইতালিতে শাক ইতিমধ্যেই বিখ্যাত। অবশ্য রাজারাজড়াদের খাদ্য হিসেবেই তার রমরমা। ক্যাথরিনের আগে অবধি ফ্রান্সে শাকের কথা কেউ জানতই না। আর এটাও স্বাভাবিক, ফ্রান্সে আসার পর শাকের ডিশ ফ্লোরেনটিনা নামে খ্যাত হল। ফ্লোরেন্স যে রানি ক্যাথরিনের জন্মস্থান। অবশ্য রাজকীয় শাক যখন, তার রেসিপিতে আরও কিছু রাজন্যবর্গ থাকবেই। এই যেমন এক বিশেষ ধরনের সস, এক বিশেষ গোত্রের চিজ, ডিমের অংশ, সাদা মাংস, মাছের টুকরো ইত্যাদি। এই সবের মিলমিশে তৈরি যে শাকের পদ, তার নামই ফ্লোরেনটিনা। ফরাসি রানির বড় আদরের।


অবশ্য শাক যে ধনীদের ঘরের হাঁড়িতেই ফুটত, তার প্রমাণ শুধু ফ্রান্সের রানি একাই দেননি। মধ্যযুগের ইউরোপেও তার নজির মিলেছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইতিহাস সে কথা বলছে। শাক আসলে বিত্তশালী মানুষের খাদ্য। বিশেষ করে জার্মানির দিকে তাকালেই তা বোঝা যেত। ক্রমান্বয়ে স্যুপের বাটিতে শাক জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তার অনেক পরে অবশ্য এর ডালপালা নেমে এল মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষজনের কাছে। শাকের জনপ্রিয়তার চোটে পঞ্চদশ শতকের দুটো খাঁটি ব্রিটিশ রান্নার বইতে তার স্থান মিলেছে। শুধু তাই নয়, ক্যান্টারবেরি টেলস-এর মতো দুনিয়ার সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়েও রয়েছে এই পদের উল্লেখ। সেই সময় থেকেই একা শাক নয়, অন্যান্য সবুজ আনাজপাতিও ভেষজ বলে কদর পেতে শুরু করে।


এ তো গেল শাক কোন কোন দেশে কখন জনপ্রিয় হল, সে কথা। কিন্তু শাক এল কোথা থেকে, জানেন? স্পেন থেকে। স্পেনের জলহাওয়া শাক তৈরির উপযুক্ত বলে তার প্রথম চাষ সেখানেই হয়েছে। সেও ওই মধ্যযুগেরই কথা। একাদশ শতাব্দীতে স্পেনে জন্ম নিয়েছে শাক। তবে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে ইতালি আর ফ্রান্স। আর ইহুদিরা তার নানারকম রেসিপির উদ্ভাবন করেছে। তবে শাক যে কোনও কূটনৈতিক উপহারের অংশ হতে পারে, সে কথা স্বপ্নেও ভেবেছিলেন? ১৬০০ শতকে এই অবাক কাণ্ডটাও ঘটে গেছে কিন্তু। নেপালের মহারাজা এই শাক উপহার দিয়েছিলেন চিনকে। সেই থেকে চিনে শুরু হল শাকের জয়যাত্রা। আসল কথাটাই তো বলা হল না এখনও। শাক নিয়ে আড়ম্বর আর প্রচার সারা পৃথিবীজুড়ে কিছু কম নয়। বিশেষ করে ইউরোপের ইতিহাস কোথাও শাক ঢাকেনি। আপন মহিমায় বিরাজিত। কিন্তু কূটনীতি থেকে আভিজাত্য, যে দেশ তাকে যেমন মর্যাদাই দিক না কেন, তার দৈবী সূত্রটা কিন্তু ভারত ছাড়া আর কেউ দেখাতে পারেনি। লিখিত ইতিহাসেরও আগে, সেই পৌরাণিক কাল থেকেই ভারতীয় এক মহাদেবীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে শাক। তিনি দেবী শাকম্ভরী। মহামায়া দুর্গার এক রূপ। মূলত নিরন্ন পৃথিবীতে খাদ্য হয়ে তিনিই উৎপন্ন হয়েছিলেন। তাঁর উৎপত্তি হয়েছিল এই শাকের রূপেই। সবুজ রং তাঁর। শাক তাই বর্তমানে যতই সস্তার ঝুড়িতে ঠাঁই পাক না কেন, তার ঐতিহ্যবাহী অতীতটা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Spinach, #Cress, #Vegatables

আরো দেখুন