কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সদর দপ্তর সরানোর পর দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা, বন্ধ বেতন
আরও ভালোভাবে পরিচালনা করা হবে। এই যুক্তি দিয়ে যে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সদর দপ্তর কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বরে সরানো হয়েছিল সেটি এখন ধুঁকছে। বাংলাকে বঞ্চিত করতে এই কাণ্ড তড়িঘড়ি ঘটানো হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর আগে। ওড়িশা মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ওএমডিসি) নামে ওই সংস্থার কর্মীদের বেতন জানুয়ারি থেকে বন্ধ। বেতন চালু-সহ নানা বিষয়ের সমাধান করার দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি দিয়েছে সংস্থার কর্মী সংগঠন। তারপর প্রায় একমাস কেটে গেলেও পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি।
সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতা থেকে সদর দপ্তর ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ সক্রিয় হন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। বিজেপির এই প্রভাবশালী নেতা ওড়িশার ভূমিপুত্র। সংস্থার নামের সঙ্গে ‘ওড়িশা’ শব্দটি যুক্ত। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন লৌহ আকরিক ও ম্যাঙ্গানিজ খনিগুলিও ওই রাজ্যে অবস্থিত। এই যুক্তি দেখিয়েই স্থানান্তর পর্বটি সারা হয়।
কিন্তু কর্মীমহলের বক্তব্য ছিল, যুক্তিটি ছিল একেবারেই ছেঁদো। ১৯১৮ সালে গোড়াপত্তনের পর থেকে ওএমডিসির সদর দপ্তর ছিল কলকাতায়। বেসরকারি একটি বড় শিল্প বাণিজ্য গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন ছিল সংস্থাটি। ১৯৮০ সালে সংসদে বিল পাশ করিয়ে ওই শিল্প গোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ওএমডিসির ৫১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড। এই কারণে সংস্থাটির পরিচালন ব্যবস্থা ইস্পাত মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে।
সদর দপ্তর স্থানান্তরের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে সোচ্চার হন কর্মীরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়। হাইকোর্টে মামলাও হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর চার লাইনের এক বিজ্ঞপ্তি জারি-সহ কর্মীদের দ্রুত ভুবনেশ্বর অফিসে যোগ দিতে বলে। সল্টলেকের এজি ব্লকে নিজস্ব অফিস বাড়ি থেকে সদর দপ্তরটি চলত। পরিবর্তে ভুবনেশ্বরে একটি ভাড়া বাড়িতে নতুন সদর দপ্তর চালু করা হয়। সংস্থার কর্মী ও আধিকারিকদের বক্তব্য, সংস্থাটির পরিচালনা কলকাতা থেকেই সহজ ছিল। কারণ সংস্থার ৬টি খনি ওড়িশার বরবিল এলাকায় অবস্থিত। ভুবনেশ্বরের তুলনায় কলকাতা থেকে সরাসরি এবং দ্রুত সেখানে যাওয়া যায়। খনির উৎপাদিত লোহা-ম্যাঙ্গানিজ মূলত যেসব সংস্থা কেনে সেগুলির অফিস কলকাতায়। শ্রমিক সংগঠন এনএফটিইউ রাজ্য সভাপতি অমিয় সরকার জানান, সদর দপ্তর স্থানান্তরের কোনও প্রয়োজন ছিল না। সংস্থার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংগঠনের আলোচনা চলছে। সদর দপ্তর স্থানান্তরের আগেই এই সংস্থাটি কিছু সমস্যায় পড়েছিল। তা পরে আরও জটিল আকার নিলে কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।