বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে বিরাট ধস, আতঙ্কিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
তিন সঙ্কট একসঙ্গে। একদিকে নিয়ম করে লাগাতার বাড়ছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। অন্যদিকে, ডলারের বিনিময়ে টাকার মূল্য এসে ঠেকছে তলানিতে। আর এবার বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে হঠাৎ ধস। গত দু’সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার এক ধাক্কায় ১১০০ কোটি ডলার কমে গিয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহে কমেছিল ৯০০ কোটি ডলার। চলতি সপ্তাহের হিসেবে আবার ২০০ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই প্রবণতায় রীতিমতো আতঙ্কিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
পেট্রল-ডিজেলের ঊর্ধ্বমুখী দাম চরম মূল্যবৃদ্ধির আঁচের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমদানি বাণিজ্যকে বিপুল ধাক্কা দিয়ে চলেছে টাকার দর কমে যাওয়া। এর মধ্যে বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারের ধস বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতিকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে। এই তিন সঙ্কটের জেরে ভারতের অর্থনীতি এতটাই টালমাটাল যে, শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। প্রধানত যুদ্ধ এবং তার জেরে পেট্রপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। তারপরই দেশের অভ্যন্তরে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের সতর্কবার্তা—৬ শতাংশের অনেকটাই উপরে যেতে চলেছে মুদ্রাস্ফীতির হার, যা দেশের পাইকারি ও খুচরো পণ্যে বিপুল প্রভাব ফেলবে।
ফেব্রুয়ারি মাসেই ১৩ শতাংশের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার। খুচরো মুদ্রাস্ফীতির সূচক পৌঁছেছে সাড়ে ৬ শতাংশে। ঊর্ধ্বমুখী মূল্যবৃদ্ধির আঁচের মধ্যেই বিগত পাঁচ দিনে চারবার বেড়েছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতির হার মার্চ মাসের হিসেবে এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়তে পারে। খাদ্যপণ্যের উপর আসতে চলেছে বড়সড় দামবৃদ্ধির আঘাত। শুক্রবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে এখন ভারতের তেল সংস্থাগুলি গড়ে প্রতি ১৫ দিনের হিসেবে অশোধিত তেল কিনছে। রাশিয়া থেকে সস্তার অশোধিত তেল কেনা হচ্ছে। কিন্তু তা আসবে আগামী মে মাসে। ভারতে যত তেলের প্রয়োজন, সেটাও এর মাধ্যমে পূরণ হবে না। সুতরাং ডলার মূল্যে অশোধিত তেল ভারতকে কিনতে হবে। এই অবস্থায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তিন সঙ্কটকে একসঙ্গে সামলাতে দিশাহারা। বোর্ডের বৈঠকের পর জারি করা বিবৃতিতে সেই আশঙ্কা ও উদ্বেগ স্পষ্ট। সংসদের বাজেট অধিবেশন চলছে। প্রতিদিনই সেখানে পেট্রপণ্যের দাম নিয়ে মোদি সরকারকে চেপে ধরছে বিরোধীরা। সোমবার দুই কক্ষেই বিরোধীদের পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে আলোচনা চেয়ে নোটিস দেওয়া হবে। তাদের দাবি দু’টি। এক, পেট্রল ডিজেলের উপর কেন্দ্রীয় ট্যাক্স হ্রাস। এবং দুই, ভরতুকির পরিমাণ বৃদ্ধি।