স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ কমানোর সুপারিশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, দুশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ
সম্প্রতি পিএফের সুদ একধাক্কায় অনেকটা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বার্ষিক ৮.৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৮.১ শতাংশে। তার সাফাই দিতে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্বয়ং। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আঁচ কমেনি। আশঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কারণ, পিএফের পাশাপাশি এবার ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও সুদ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্রতি তিন মাস অন্তর সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেই হিসেবে আগামী এপ্রিল মাসে নতুন হার ঘোষণা হওয়ার কথা। বিগত বেশ কয়েকটি ত্রৈমাসিকে এই সেভিংস স্কিমগুলিতে সুদ কমায়নি কেন্দ্র। কিন্তু এবার তা কমানোর জন্য সুপারিশ করেছে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। তাদের দাবি, দেশে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চলছে, তাতে আগামী অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ এপ্রিলেই ৯ থেকে ১১৮ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানো উচিত। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ১.১৮ শতাংশ সুদ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এখন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে যে সুদ পাওয়া যায়, তা অন্যান্য ব্যাঙ্কের যে কোনও ফিক্সড ডিপোজিটের তুলনায় বেশি। এখন সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ সুদ পান সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে। এখানে সুদের হার বার্ষিক ৭.৬ শতাংশ। প্রবীণদের জন্য নির্দিষ্ট সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার ৭.৪ শতাংশ। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফের সুদের হার ৭.১ শতাংশ। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটে ৬.৮ এবং কিষান বিকাশপত্রে ৬.৯ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। মেয়াদি আমানতগুলিতে সুদের হার আরও কম। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, সুদের হার যদি এর থেকেও নীচে নেমে যায়, তাহলে তাঁরা কোথায় সঞ্চয় করবেন? যে দেশে সামাজিক সুরক্ষা বলে কোনও বস্তু নেই, সেখানে বহু মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল সঞ্চয়ের সুদটুকুই। এমনকী প্রবীণদের জন্যও কোনও বাড়তি সুরাহা দিতে রাজি নয় সরকার। শেয়ার বাজারে লগ্নির দিকেই কি জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের? প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে শেয়ার বাজারে কী পরিস্থিতি চলছে, তা সবারই জানা। এরপরও সরকার যদি জনসাধারণকে সেই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করে, তাহলে বাঁচার অধিকারটুকুও চলে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
কেন্দ্রের যুক্তি, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদ বেশি থাকলে, তার জন্য ব্যাঙ্কগুলি বেকায়দায় পড়ে। কারণ, সাধারণ মানুষ ডাকঘরের প্রকল্পগুলিতেই টাকা রাখতে উৎসাহী হন। তাই ব্যাঙ্ক আমানত সংগ্রহে পিছিয়ে থাকে। সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্কমুখী করার জন্য সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয় তারা। এর ফলে ঋণের উপর সুদের হারও কমানো যায় না। তাতে শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়। কারণ বাড়ি, গাড়ি সহ কৃষি ও শিল্পের ঋণে সুদের হার বাড়লে, তা ভালো লক্ষণ নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও বক্তব্য, বাজারের সেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সুদের হার কমানোর উচিত। তবে এর উল্টো মতও উঠে আসছে। যেখানে মুদ্রাস্ফীতি লাগামছাড়া, সেখানে সুদের হার বাড়ানোর পক্ষেই সওয়াল করেন বিশেষজ্ঞরা। এই যুক্তিতেই সম্প্রতি সুদ বাড়িয়েছে আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে আরবিআইয়ের সেই সুপারিশ কতটা গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার, এখন সেটাই দেখার।