কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

এক মাসের বিরামহীন লড়াই, কোমা থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাল বাঙুর

March 30, 2022 | 2 min read

অসম্ভবকে সম্ভব করার আরেক নাম হয়ে উঠল টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতাল। সেখানকার চিকিৎসকদের এক মাসের বিরামহীন লড়াইয়ে কোমাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন এইচআইভি, ক্রিপ্টোকক্কাল মেনিনজাইটিস ও কোভিড— তিন রোগে আক্রান্ত এক যুবক। দমদমের বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৌগত সামন্ত (নাম পরিবর্তিত) ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক থেকে জ্বর, খিঁচুনি আর ভুল বকার সমস্যায় ভুগছিলেন। হঠাৎ একদিন অজ্ঞান হয়ে যান। স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ক্রিপ্টোকক্কাল মেনিনজাইটিস ও কোভিড ধরা পড়ে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এম আর বাঙুরের ইমার্জেন্সিতে। তখন তিনি ভেন্টিলেশনে। প্রায় কোমাচ্ছন্ন অবস্থা। বাঙুরের সিসিইউ ইনচার্জ ডাঃ শুভব্রত পাল এবং তাঁর টিমের অধীনে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাঁকে। দেখা যায়, রোগীর প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউবটি ব্লক হয়ে গিয়েছে। রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট বলছে, শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অ্যা঩সিডের মাত্রা হু হু করে বেড়েছে। যমে মানুষে টানাটানি পরিস্থিতি।

ভর্তির তিনদিন পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হয়। সপ্তম দিনের মাথায় মারাত্মক বিপদ হয়। হার্ট ব্লক হয়ে প্রায় মৃত্যুমুখে চলে যান ২৬ বছরের ওই যুবক। ফের ভেন্টিলেশন। ফের চিকিৎসক এবং গোটা টিমের বিনিদ্র রজনী যাপন। পরবর্তী দু’দিনের প্রতিটি সেকেন্ড ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এবারও ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে আসেন সৌগত। কিন্তু শরীরে একের পর এক সংক্রমণ ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, সৌগত এইচআইভিতে আক্রান্ত। সঙ্গে কোভিড ও মেনিনজা‌ই঩টিস হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। সিডি-৪ কাউন্ট ৪০০’র বেশি থাকা উচিত। সৌগতের ক্ষেত্রে তা কমে হয়েছিল ৬! চিকিৎসকরা বলেন, তখন যে কী অবস্থা, বলে বোঝানো যাবে না। ছেলেটির একদিকে সেপটিক শক হয়েছে, রক্তচাপ হুড়মুড় করে নামছে, হার্ট দুর্বল, কিডনি ছাড়া প্রায় প্রতিটি অঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হতে শুরু করেছে। উঠে বসার মতো অবস্থা নেই।

সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ঠিক হয়, নিউট্রিশনাল থেরাপি করা হবে। তারপর অসুখ থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেন সৌগত। অবশেষে ২৭ মার্চ, ভর্তির এক মাস ৩ দিন পর ছুটি পেলেন। এম আর বাঙুরের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখে তখন চওড়া হাসি। সৌগত ও তাঁর দাদা পরমার্থের (নাম পরিবর্তিত) চোখমুখেও স্বস্তি। মঙ্গলবার পরমার্থবাবু বললেন, মৃত্যুমুখ থেকে ভাইকে ফিরিয়েছেন বাঙুরের ডাক্তাররাই। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সীমা-পরিসীমা নেই। বাঙুরের সুপার ডাঃ শিশির নস্কর বলেন, গোটা বাঙুর টিমকে প্রচুর অভিনন্দন। খুব কঠিন লড়াই ছিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #Bangur Hospital

আরো দেখুন