বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

লিঙ্গ পরিবর্তন করার সময় এই কথাগুলি মাথায় রাখলে সহজ হবে রূপান্তর

March 31, 2022 | 4 min read

ছবি সৌজন্যে: News Track

পুরুষ দেহে নারীর মন বা নারী দেহে পুরুষের বসবাস, চলতি কথায় আমাদের কাছে তারা রূপান্তরকামী নামেই পরিচিত। রূপান্তর মানেই পরিবর্তন। কিন্তু এই বদলের পথ সুদীর্ঘ। সমাজ, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সব কিছুকে কাটিয়েই এগিয়ে যেতে হয় পরিবর্তনের পথে…

কেমন হবে সেই পরিবর্তনের পথ? জেনে নেওয়া যাক…

রূপান্তরের সময় কেমন পোশাক পরবেন?

একটি মেয়ে হিসেবে নারীজীবন যাপন করতে, পোশাকের মূল জিনিসগুলি বেছে নিন, প্রথমে ছোটখাটো জিনিসগুলিতে দক্ষতা অর্জন করে নিয়ে তারপর আরও কঠিন জিনিসগুলির দিকে যাওয়া উচিৎ। শাড়ি পরার তুলনায় স্কার্ট বা সালোয়ার-কামিজ পরা বেশ সহজ। এক-দু’বার  পরে দেখার জন্যে, শাড়ি ঠিক আছে, এমনকি জামাকাপড় রাখার আলমারির মধ্যেও একটা দুটো শাড়ি রাখা যেতে পারে। কিন্তু যেহেতু একজন রূপান্তরকামী, নারী হওয়ার জন্যে কিভাবে একটি শাড়ি পরতে হয় শিখেছেন; তার মানে এই নয় যে সেটা সবসময় প্রকাশ্যে পরতে হবে। নারীরা একটু ভিন্ন ভাবে তাদের শরীর ও পোশাক সামলে থাকেন। সেগুলি শিখতে হবে, রপ্ত করতে হবে এবং এতে সময় লাগবে।

প্রতিদিনের পোশাকের জন্য, চারপাশের মেয়েদের দিকে তাকান। একজন রূপান্তরকামীর লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্য মহিলাদের ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া। অবশ্যই চারপাশের মেয়েদের দিকে লক্ষ্যহীনভাবে তাকিয়ে থেকে নয়, তিনটি জিনিসে লক্ষ্য রাখতে হবে, নারীর বয়স, শরীরের ধরন এবং পেশা।

শারীরিক ধরন


যদি কেউ জীবনের প্রান্তে পৌঁছে রূপান্তর করেন, সেক্ষেত্রে তার নতুন শরীর সম্বন্ধে কিছুটা অসন্তোষ থাকতে পারে। বিস্তৃত কাঁধ, সংকীর্ণ পশ্চাৎদেশ, বেশী উচ্চতা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাপ ইত্যাদি নিয়ে অসন্তোষ থেকেই যায়। কিছু লোক ভাগ্যবান হন এবং এক প্রান্তে একটি জন্মসূত্রে মহিলা হিসাবে গণ্য হয়ে থাকেন, অন্যদিকে অন্য কোন খামতি নিয়ে তার অসন্তোষ থাকতেই পারে। এমন কিছু জিনিস আছে যার পরিবর্তন সম্ভব নয়; এমনকি অস্ত্রোপচারের দ্বারাও সম্ভব নয়। কিন্তু এমন অনেক পোশাক আছে যা মেয়েরা পরিধান করতে পারে। এমন অনেকগুলি পোশাক আছে এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে লুকিয়ে ফেলতে এমনকি পরিস্থিতির অনুকূল করে তুলতে সাহায্য করবে এবং ইচ্ছানুযায়ী সেই বৈশিষ্টগুলিকে প্রকট করেও তুলতে পারা যেতে পারে। শরীরের নমনীয় হয় কিন্তু যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি থাকলেই তা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। সঠিক আহার এবং শরীরচর্চা এই পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।

ফ্যাশন সবসময় পরিবর্তিত হচ্ছে। আজ যেটা চলছে সম্ভবত অতীতেও সেটা চলেছে এবং অদূরবর্তী ভবিষ্যতেও হয়ত তা চলবে। উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে আজ প্রশস্ত কাঁধকে ভ্রু কুঁচকে দেখা হয় কিন্তু ১৯৮০ সালে মেয়েরা প্যাডেড কাঁধওয়ালা পোশাক পরত। পেন্সিল প্যান্ট থেকে যেকোন দিন ফের বেলবটমসে ফিরতে পারে ট্রেন্ড। সেক্সি পোশাক পরার প্রলোভন দমন করতে হবে। রূপান্তরকামী মেয়েরা তাদের পুরুষালী বৈশিষ্টগুলিকে আড়ালে করার জন্য খোলামেলা পোশাক পরেন এবং অতিরিক্ত মেকআপ করেন। এটি ক্রমেই রূপান্তরকামীদের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একজন রূপান্তরকামী মহিলা হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করার থেকে একজন সাধারণ মেয়ে হিসাবে নিজেকে প্রদর্শন করা ভাল।

রূপান্তরের সময় স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন কীভাবে

হরমোন এবং ওষুধ সংক্রান্ত বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হরমোন থেরাপির সময় কিছু ভাল অভ্যাস মেনে চলতে হবে। জিরো ফিগার পাওয়ার জন্যে উপাস যে করাই ভাল। প্রতিদিনের ডায়েটে, ম্যাক্রো এবং মাইক্রো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করা, দিনে ৬– ৮  ঘন্টা ঘুম,তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। শরীরের বেড়ে ওঠার সময়, শরীরের জন্য আদর্শ পরিবেশ দিতে  হবে।

মেকআপ এবং চেহারা

মেকআপ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার; যথাযথভাবে একে ব্যবহার করা হলে, এটি ক্যামেরার সামনে যা প্রায় যাদু করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ ফটো না তুলে থাকা যায় তত ভাল। কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বা দিনে বেরোতে চান তাহলে ফাউন্ডেশন এবং পাউডার এড়িয়ে চলুন। মেক আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীগুলি হল একটি আই লাইনার এবং মাস্কারা। মেয়েদের চোখ মাথার খুলির পরিপ্রেক্ষিতে বড় হয়। এই দুটি জিনিসে সাহায্য হবে। লিপস্টিকের রং বাছার আগে পরীক্ষা করে নিন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।অধিকাংশ মহিলাই খুব সামান্য মেকআপ করে থাকেন। রূপান্তরকামীকেও একই পথ অবলম্বন করতে হবে।

মুখে দাড়ি-গোঁফ নিয়ে একটি মেয়ে হিসাবে বসবাস করা অত্যন্ত অসুবিধাজনক। সবসময় স্ব-সচেতন থাকতে হবে। সুতরাং, পুরো সময় মহিলা হিসাবে বাঁচবার আগে স্থায়ীভাবে লেসার হেয়ার রিমুভাল করিয়ে নেওয়া বাঞ্চনীয়। একই কথা কণ্ঠস্বরের জন্য প্রযোজ্য। কণ্ঠস্বর কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা শিখতে হবে। গবেষণায় জানা গিয়েছে, ৯৭ শতাংশের মানুষের ধারণা তারা যা দেখে তা দেখে নয়, অনুভূতি, গন্ধ এবং অন্যান্য ধরনের ধারণার ভিত্তিতে গঠিত হয়। যদি মহিলা কন্ঠস্বর থাকে, তবে পাসিং সম্ভবপর হয়। দেহের মতোই, কণ্ঠস্বরও নমনীয়, এক্ষেত্রেও, ইচ্ছাশক্তি থাকলেই স্বর পরিবর্তন সম্ভব। ফোনে ভয়েস রেকর্ডার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, অন্য মানুষের সাথে ফোনে কথা বলার সময়, ভয়েস রেকর্ড করলে উপকার হয়। মেয়েলি ভঙ্গিতে  জোরে জোরে বই, সংবাদপত্র ইত্যাদি পড়লেও উপকার হয়।

রূপান্তরের সময় নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুন

রূপান্তরের সময় নিজের সমালোচনা করবেন না। লক্ষ্যগুলিকে বাস্তবসম্মত রাখতে হবে, একজন রূপান্তরকামীর লক্ষ্য হওয়া উচিত পাশের বাড়ির মেয়ে ওঠা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়া নয়। নারীর শরীরের আকার, মাপ এবং রঙের ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকেন, তাই শরীরের উপর সহানুভূতিশীল হন। কসমেটিক শিল্প বা বলিউড সৌন্দর্যের চূড়ান্ত মানদণ্ড হতে পারে না। তাই ওই জিনিস পূরণ করতে শরীরের উপর জোর না করাই শ্রেয়। বলিউড বা বিজ্ঞাপন শিল্প দ্বারা ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের চরম প্রদর্শন দেখে নিরুৎসাহিত হবেন যে। কারণ জীবন বিনোদন জগৎ নয়।
পূর্ণ সময় মেয়ে হিসাবে থাকার আগে নিজের জন্য সামান্য হলেও সঞ্চয় রাখা উচিত। একটি মেয়ে হিসাবে বাঁচা কিন্তু ব্যয়বহুল! পোশাক, মেকআপ, হরমোন, জুতো, জিম সবই ব্যয়বহুল। রূপান্তরের সময় টাকার সমস্যা আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে। ট্রানজিশনের শুরুর দিনগুলি খুবই উদ্বেগের হয়, গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলির অভিজ্ঞতা যদি আতঙ্কজনক হয়, তাহলে এটি বাকি জীবনে প্রভাব ফেলবে।

অস্ত্রোপচার

অস্ত্রোপচার করার জন্য অহেতুক তাড়াহুড়ো করবেন না, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়া উচিত। যদি চিকিৎসকেরা অনুমতি দেন, হরমোন চিকিৎসার আগেই এটা করানো উচিত। ফলাফল সৌন্দর্য নিয়ে ভাববেন না। ২৪ বছর বয়সে পাওয়া নারীত্বের মূল্য ৩২ বছর বয়সে এসে বেশি ভাল দেখতে লাগা নারীত্ব পাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ এক্ষেত্রে অস্ত্রোপাচারের পরেও বহু বছরের নারী জীবন পাওয়া যাবে; কাউকে ভালোবাসার ও কারুর সাথে থাকার সুযোগও পাবেন রূপান্তরকামীরা।

ভালোবাসা এবং প্রেম

প্রেম এবং যৌনতার বিষয়ে, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যৌনতার জন্যে অস্ত্রোপাচার করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। ডিজিটাল যুগ, অনেক প্রেমই অনলাইনে ঘটছে। কোন রূপান্তরকামীর ছবিগুলি যদি একটু ব্যক্তিগত হয় তবে, তা এডিট বা ক্রপ করে নিতে ভুলবেন না। প্রতিটি রূপান্তরকামী একদিন, কারো মা, কারো স্ত্রী বা কন্যা হবেন অথবা কর্মজীবনে একটি অত্যন্ত সম্মানিত জায়গায় থাকবেন। একজন রূপান্তরকামী হয় চাইবেন না যে, তার ছবিগুলি অন্যান জায়গায় অন্যভাবে ব্যবহৃত হোক। গন্ডীর মধ্যে বেঁধে রাখলে চলবে না। নতুন চিন্তাধারার প্রতি উন্মুক্ত থাকতে হবে, নতুন কিছু করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকুন। যৌনতা আনন্দদায়ক হবে, তার জন্যও সমানভাবে তৃপ্তিদায়ক হতে পারে। প্রেম এবং বিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করবে না। অসম্মানজনক এবং বিষাক্ত সম্পর্কে থাকার চেয়ে একা থাকা ভাল, এই উপলব্ধি হওয়া প্রয়োজন। জন্মসূত্রে একজন মহিলা জীবন থেকে যা আশা করে, একজন রূপান্তরকামীরও তা আশা করার অধিকার আছে।

নারী হয়ে ওঠা সহজ নয়, কিন্তু এই যাত্রাপথ কঠিন হলেও অসাধ্য নয়। প্রতিটি মানুষের নিজের মতো করে জীবন যাপন করার অধিকার রয়েছে। রূপান্তরকামী নারী হয়ে ওঠার কোন নির্দিষ্ট ছক নেই, বা নিয়ম নেমে চলার কিছু নেই। সমাজের কথায় কান দিয়ে নিজের মতো এগিয়ে চলেই হয়ে উঠুন নারী। পরিবেশ পরিস্থিতি প্রতিকূল হবেই, কিন্তু প্রতিকূলতাকে জয় করেই নিজের জীবন নিজের মতো করে যাপন করতে হবে। এতেই লুকিয়ে থাকে জীবনের সার্থকতা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Gender change, #transgender

আরো দেখুন