পেট্রল – ডিজেলের পর দাম বাড়ল কেরোসিন আর অটো এলপিজির, নাভিশ্বাস আমজনতার
একধাক্কায় অনেকটাই বাড়ল কেরোসিনের দাম। এবার প্রতি লিটারে বাড়তি ১৫ টাকা গুনতে হবে রেশন গ্রাহকদের। শুধু কেরোসিন নয়, একইদিনে কোপ পড়েছে অটো-এলপিজিতেও। সেখানেও দাম বেড়েছে লিটার পিছু ৯ টাকার উপর। মোদি জমানায় এত চড়া হারে এই দুই জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এর আগে হয়নি।
কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের হেঁশেলে। রাজ্যে এখন প্রায় সাড়ে ৯ কোটি রেশন গ্রাহক রয়েছেন। কলকাতা ও সল্টলেকের বাসিন্দাদের এখন থেকে ৭৯ টাকা ৬২ পয়সা দরে প্রতি লিটার কেরোসিন কিনতে হবে। মার্চ মাসেও এই দাম ছিল ৬৪ টাকা ২৪ পয়সা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বাড়িয়ে চলায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত মাসেও কেরোসিনের দাম বেড়েছিল ৭ টাকার আশপাশে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে একবার লিটার পিছু দাম প্রায় ৮ টাকা বেড়েছিল। এতদিন পর্যন্ত সেটাই ছিল রেকর্ড বৃদ্ধি। সেই নজিরকে এবার একলহমায় ভেঙে দিয়ে কেরোসিনের দাম বাড়ল লিটার পিছু ১৫ টাকা ৩৮ পয়সা।
তেল সংস্থাগুলির ইস্যু প্রাইসের ভিত্তিতে খাদ্যদপ্তর শুক্রবার রেশনে বিক্রি হওয়া কেরোসিনের নতুন দামের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষ থেকেই কেন্দ্রীয় বাজেটে কেরোসিনের উপর ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গুপ্ত জানিয়েছেন, শুধু ভর্তুকি বন্ধ নয়, রেশনে কেরোসিন বিক্রি করে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিও লাভের মুখ দেখছে। যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে, তাতে গরিব মানুষদের পক্ষে আর রেশনে কেরোসিন কেনা সম্ভব হবে না। কাঠ, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। ফাল বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পাবে।
হাইকোর্টে স্থগিতাদেশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই কেরোসিনের বরাদ্দ কমাতে পারেনি। রাজ্য এখনও মাসে ৫৮ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন পায় রেশনে বণ্টনের জন্য। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেক গ্রাহকই আর কেরোসিন তুলছেন না। ফলে বিক্রিতেও ভাটা পড়েছে। এই প্রবণতা আরও বাড়বে। এপ্রিল মাসে রেশন গ্রাহকদের মাথাপিছু বরাদ্দ ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ মিলিলিটার করেছে খাদ্যদপ্তর।
একইদিনে লিটার পিছু অটো-এলপিজির দাম বেড়েছে ৯ টাকা ১ পয়সা। ইন্ডিয়ান অয়েলের ঘোষণা অনুযায়ী, এখন তার দাম ৭৪ টাকা ৮২ পয়সা। এক মাস আগেও এই দাম ছিল লিটার পিছু ৬৫ টাকা ৮১ পয়সা। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, সাম্প্রতিককালে এক ধাক্কায় এতটা দাম কখনও বাড়েনি। গত বছর ১ এপ্রিল এর দাম ছিল লিটার পিছু ৫৩ টাকা ৬৬ পয়সা। ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন বলেন, এই বিশেষ এলপিজি’তে শুধু যে অটো চলে, তা নয়। বেশ কিছু বাণিজ্যিক গাড়িও চলে। যাঁরা পেট্রল পাম্পে তেল ভরতে আসছেন, তাঁরা দাম শুনে চমকে যাচ্ছেন। এত দাম কেন, তার জবাবদিহি চাইছেন আমাদের কাছে। আমাদেরও ব্যবসা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।