ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে রেকর্ড ক্রেডিট লেন্ডিং, কয়েক লক্ষ কর্ম সংস্থানের সম্ভবনা
সামনেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য শীর্ষ সম্মেলন। লক্ষ্য, বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এরই মধ্যে ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশের জন্য ঋণ (ক্রেডিট লেন্ডিং) নেওয়ার ক্ষেত্রে নজির গড়ল পশ্চিমবঙ্গ। যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সৃষ্টি করবে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান।
কোভিড পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেগে থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির কাজের পরিধি বিস্তারের জন্য ঋণদানে সাহায্য করেছে। এতেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে ক্রেডিট লেন্ডিংয়ের অঙ্ক। গত অর্থবর্ষে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি ঋণ পেয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। পরের তিন মাসের ক্রেডিট লেন্ডিং রিপোর্ট রাজ্যের কাছে আসবে মে মাসের শুরুতে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের আধিকারিকদের ধারণা, ওই তিন মাসে আরও অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট লেন্ডিং হবে। সেক্ষেত্রে মোট ঋণ প্রদানের অঙ্ক ছাড়াবে এক লক্ষ কোটির গণ্ডি।
২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে সব মিলিয়ে মোট ৭০ হাজার কোটি টাকা ক্রেডিট লেন্ডিং হয়েছিল। সেই অঙ্ককে গত অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাসেই ছুঁয়েছে এই রাজ্য। আর ২০২০-’২১ সালে এই অঙ্ক গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ হাজার কোটি টাকা। তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ক্রেডিট লেন্ডিং প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির ব্যবসা বাড়তে চলেছে। আর ব্যবসা বাড়লেই বাড়বে কর্মসংস্থান, জানিয়েছেন এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য রাজ্যকে শিল্পে দেশের সেরা করা। এই রাজ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ইতিমধ্যেই দেশে দু’নম্বর স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। রাজ্যে এখন প্রায় ৮৯ লক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ইউনিট রয়েছে। যেখানে কর্মরত প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ। রাজ্যের এক আধিকারিক জানান, যাতে আগামী এক থেকে দু’বছরের মধ্যে দেড় কোটি মানুষকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, সেই চেষ্টাই চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রেডিট লেন্ডিংকে একটি সূচক হিসেবে ধরা যেতে পারে। যা বৃদ্ধি পেলে ধরে নিতে হবে যে, রাজ্যে বিনিয়োগ বাড়ছে। অর্থাৎ উল্টোদিক থেকে ভাবলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে চর্ম, ফার্নিচার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সহ বিভিন্ন মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে।
কোভিড উত্তর পর্বে শিল্প সংস্থাগুলির যাতে ঋণ পেতে অসুবিধা না হয়, সেকারণে ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা। ২০-২১ এপ্রিল বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের এই সাফল্যকে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন এক আধিকারিক।