আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

মানবদেহের সম্পূর্ণ জিনোম ক্যাটালগ তৈরি করলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা!

April 3, 2022 | 2 min read

ছবি: প্রতীকী

এই প্রথম মানুষের জিনগত কাঠামোর (জেনেটিক ইন্স্ট্রাকশন বা জিনোম)-এর প্রায় সম্পূর্ণ ও নিখুঁত তালিকা তথা ক্যাটালগ তৈরি করতে পেরেছেন আমেরিকার ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ‘হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট’-এর বিজ্ঞানীরা। ‘টেলোমিয়ার টু টেলোমিয়ার কনসর্টিয়াম’ নামক প্রজেক্টে তাঁরা ও বিশ্বের অন্য বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে রহস্যভেদ সম্ভব হয়েছে মানবশরীরের জিনগত কাঠামোর। বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ‘সায়েন্স’কে তাঁরা জানিয়েছেন, জিনগত কাঠামোর ব্লু প্রিন্ট থেকে কমপক্ষে আট শতাংশ জিনোম কোডের হদিশ এত দিন তাঁদের কাছে ছিল না। দীর্ঘ গবেষণার পরে নিখুঁত ও ব্যবধানবিহীন (গ্যাপলেস) ক্যাটালগ বানাতে পেরেছেন তাঁরা। এতে মানুষের শরীরে কোষ কী ভাবে তৈরি হয় ও কোষের কার্যকারিতা আরও ভাল ভাবে বোঝা যাবে। যে তথ্য হাতে আসায় প্রভূত উন্নতি হবে চিকিৎসাবিদ্যায়। গবেষকেরা জানান, ২০২১ সালের মে-তেই মানুষের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সম্পূ্র্ণ ও ব্যবধানবিহীন ক্যাটালগ বানাতে সক্ষম হন তাঁরা। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ বিশ্বের দরবারে বিষয়টি প্রকাশ করেন।

ন্যাশনাল জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটেই মানুষের জিনগত কাঠামোর প্রথম ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয় ২০০৩-এ। সেই সময় বিজ্ঞানীরা সমস্ত তথ্যের সন্ধান পাননি। প্রায় দু’হাজার লক্ষ বেস ছিল অজানা। গবেষকরা জানিয়েছেন, জিনোম গঠিত হয় ডিএনএ-র একটি সম্পূর্ণ সেট দিয়ে। এই ডিএনএ-এ সেটটি কম পক্ষে ৩০০ কোটি নিউক্লিওটাইড (নিউক্লিওসাইড বা কোষের গুরুত্বপূর্ণ একটি একক এবং ফসফেট সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের জৈব যৌগ যা ডিএনএ ও আরএনএ-র মনোমার হিসাবে কাজ করে) দিয়ে গঠিত। এই নিউক্লিওটাইডের ২ শতাংশেরও কম প্রোটিন কোডিং জিন। বাকি ৯৮ শতাংশেরও বেশি অংশের মধ্যে থাকে নন প্রোটিন কোডিং জিন, সিউডোজিন ও জিনোমিক রেলিকস (কার্যক্ষমতা হারিয়েছে যে জিনগুলি)। মানুষের জিনোমের অর্ধেকের বেশি সিকোয়েন্স পুনরাবৃত্তিমূলক ও একে অপরের অল্প পরিবর্তিত প্রতিলিপি। ফলে, আগে সম্পূর্ণ ও নিখুঁত জিনগত কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা যেত না।

তখন জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের যে প্রযুক্তি ব্যবহার হত তা এক এক বারে মাত্র ৫০০টি করে নিউক্লিওটাইড শনাক্ত করতে পারত। তার পরে ‘ওভারল্যাপিং’-এর মাধ্যমে পুরো জেনেটিক ইন্স্ট্রাকশন সিকোয়েন্স তৈরির চেষ্টা হত। গবেষকেরা এই ‘ওভারল্যাপিং সেগমেন্ট’-এর সাহায্যেই সিকোয়েন্সের পরবর্তী নিউক্লিওটাইডটি শনাক্ত করার কাজ চালিয়েছেন। গবেষণার ফলে সিকোয়েন্সিংয়ের প্রযুক্তি হয়েছে উন্নত। মানবকোষের জিনোমের যে অংশগুলি বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল তা জানা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে উন্নত নতুন প্রযুক্তির ফলে ৩০০ কোটির মধ্যে মাত্র এক কোটি নিউক্লিওটাইড শনাক্ত করা বাকি রয়েছে গবেষকদের। অর্থাৎ মাত্র ০.০৩ শতাংশ!

তবে জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যাডাম ফিলিপি জানিয়েছেন লং রিড সিকোয়েন্সিং টেকনোলজি গত দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এর ফলে জেনেটিক কোডের দীর্ঘ অংশ বিজ্ঞানীদের বোধগম্য হয়েছে। গবেষণা যে এখানেই শেষ নয় তাও জানিয়েছেন ফিলিপি। তাঁর দাবি, জিনোমের মধ্যে আবিষ্কৃত অঞ্চলগুলি সতত পরিবর্তনশীল। একটি রহস্যের সমাধান আসলে আরও এক রহস্যের খাসমহলের চাবিকাঠি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Genome, #Human, #Genome catalogue, #scientists, #human body

আরো দেখুন