রাজ্যে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন, বিশিষ্টদের চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে
রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া হিংসার একাধিক ঘটনা নিয়ে এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীকে ওই চিঠি দেওয়া চিঠিতে মোট ২২ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, পরমব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, রূপম ইসলাম, অনুপম রায়, ঋদ্ধি সেন, সোহিনী সরকার, অনির্বাণ চক্রবর্তী, রূপসা দাশগুপ্ত, গৌরব চক্রবর্তী, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়েরা। প্রসঙ্গত, এঁদের মধ্যে শ্রীজাত এবং পরমব্রত ‘সরকার-ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। শ্রীজাত যেমন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় আছেন, তেমনই পরমব্রতকে রাখা হয়েছিল রাজ্যের গঠন করা ডেউচা-পাঁচামি সংক্রান্ত কমিটিতে।
হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে পূর্ব বর্ধমানের তুহিনা খাতুনের আত্মহত্যা, ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু আর পানিহাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্তের খুন এবং রামপুরহাটের ঘটনার উল্লেখ করে চিঠিতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। এরই সঙ্গে রাজ্যের পুরভোটে অশান্তি এবং বিভিন্ন জায়গায় অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট নিয়েও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে বিশেষ করে মার্চের শেষে বীরভূমে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ন’জনের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। ওই প্রসঙ্গে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘রামপুরহাটে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডটিকে যেকোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দ্ব্য়র্থহীন ভাষায় পৈশাচিক আখ্যা দেবেন। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই।’
রামপুরহাটের ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার দিকেই আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা, কারণ তিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসনের তৎপর হয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পদক্ষেপকে চিঠিতে বিশিষ্ট জনেরা স্বাগত জানালেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘এ রকম ঘটনার আগে পুলিশ প্রশাসন তৎপর বা সক্রিয় হল না কেন? হলে হয়তো বাংলায় আরও একটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক হিংসার নিদর্শন আটকানো যেত।’
এরই সঙ্গে, ২০২৩ সালে রাজ্যে যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা রয়েছে, তা যাতে সুষ্ঠু ও অবাধে হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে তা সুনিশ্চিত করার আবেদনও জানানো হয়েছে চিঠিতে। লেখা হয়েছে, ‘২০২৩-এ আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০১৮-এ পঞ্চায়েত নির্বাচনে অপরিমিত হিংসা ও বিরোধী স্বর রোধ করার ঘটনা সব মাধ্যমেই শোনা যায়। যদি তার কিছু শতাংশও সত্য হয়, তা হলে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করার প্রধানত রাজ্যের শাসকদল এবং প্রশাসনের দায়িত্ব।’
তবে, বাংলায় গত বিধানসভা নির্বাচনে জয় এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ‘অন্যতম প্রধান বিরোধী মুখ’ হয়ে ওঠার জন্য মমতাকে চিঠিতে অভিনন্দনও জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা। পাশাপাশিই লেখা হয়েছে, ‘…রাজ্যের ভিতরে ভুল-ত্রুটিগুলি শোধরানো আশু প্রয়োজন। না হলে সাম্প্রদায়িক বিভেদকামী রাজনীতি আমাদের অভ্যন্তরীণ গাফিলতির সুবিধা নিতে চেষ্টা করবে।’
ওই চিঠি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট জনেদের বক্তব্য, ‘আমরা নাগরিক সমাজের এক অংশ হিসেবে আমাদের বিবেচনা মতো পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনাবলিতে উদ্বিগ্ন হয়ে আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। এর আগেও আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের মত প্রকাশ করেছিলাম। এ বার একত্রিত হয়ে আমাদের ভাবনা ব্যক্ত করলাম। আশা করি, প্রশাসন আমাদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।’