সাধারণ করদাতাদের হয়রানি, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ খোদ আয়কর কর্তাদের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, শিল্পমহলকে নিজেদের দলে টানতে আয়করের ভয় দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সাম্প্রতিককালে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরাসরি আয়কর হানার হুমকি দিয়ে বসেছেন নজিরবিহীনভাবে। আয়করের জুজু যে একেবারেই মিথ্যা নয়, এবার তার প্রমাণ দিলেন স্বয়ং আয়কর কর্তারা। সম্প্রতি আয়কর কর্তাদের একটি সংগঠনের তরফে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে, আয়কর দপ্তর শুধু মুখেই আয়করদাতাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের কথা বলছে। বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিল নেই। করদাতারা যে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তাতে পাশে দাঁড়াচ্ছে না খোদ দপ্তরই। আয়কর আইনে করদাতাদের যে সুরাহা দেওয়ার জায়গা রয়েছে, তাকে আদৌ কাজে লাগানো হচ্ছে না। এমনকী করদাতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই শাস্তির কোপ দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগও করেছেন অফিসাররা।
আয়কর কর্তাদের হঠাৎ এমন আচরণ কেন? দপ্তরের অন্দরের তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় সরকার যে ‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’ চালু করেছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই আয়করদাতাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। সেখানে নিজেদের পক্ষে যুক্তি খাড়া করার সুযোগ পাচ্ছেন না সাধারণ করদাতা। তাই তাঁরা আদালতে চলে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিকালে বম্বে হাইকোর্ট-সহ একাধিক হাইকোর্ট এই ব্যাপারে করদাতাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। তুলোধোনা করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিসারকে। দপ্তরসূত্রে খবর, কর নির্ধারণ সংক্রান্ত গাফিলতি থাকায়, ইনকাম ট্যাক্স অফিসারের মাইনে থেকে টাকা কেটে পিএম কেয়ার্স ফান্ডে জমা করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। এসবেই ক্ষুব্ধ দপ্তরের কর্তারা। তাঁদের কথায়, কেন এই ঝড়-ঝাপ্টা শুধু একা সহ্য করতে হবে সংশ্লিষ্ট অফিসারকেই? কেন দপ্তর নিজে অফিসারের পাশে দাঁড়াবে না? কারণ, গোটা বিষয়টি ঘটে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। তাঁদের বক্তব্য, কোর্টের তরফে দপ্তরকে চরম ভর্ৎসনা করার পরও টনক নড়েনি। আয়করদাতাদের রেহাই দেওয়ার সুযোগ আছে আয়কর আইনেই। অথচ তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। এমনকী অভিযোগ জানানোর জন্য কোনও সঠিক পরিকাঠামোও গড়া হয়নি। কেন দপ্তর আয়করদাতা ও আয়কর কর্তাদের প্রতি এত উদাসীন, সেই অভিযোগই লিখিতভাবে করা হয়েছে।
চলতি অর্থবর্ষের গোড়ার দিকে বিগড়ে গিয়েছিল আয়কর পোর্টাল। লক্ষ লক্ষ গ্রাহক তাতে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। সেই সমস্যা এখন অনেকটাই কেটেছে। কিন্তু দপ্তরের কর্তাদের অভিযোগ, আয়কর ‘অ্যাসেসমেন্ট’ বা নির্ণয় করা হয় যে পোর্টালে, সেটি ঠিকমতো কাজ করছে না। আয়কর পোর্টাল ও অ্যাসেসমেন্ট সংক্রান্ত পোর্টাল দু’টির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দু’টি পৃথক তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার। তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই এই দুই পোর্টালের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। তার খেসারত দিতে হচ্ছে আয়কর কর্তাদের। শেষ পর্যন্ত তার দায় নিতে হচ্ছে সাধারণ করদাতাদেরই। সঠিক পরিকাঠামো না গড়েই তড়িঘড়ি ‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’ চালু করায় পদে পদে সমস্যায় পড়ছে দপ্তর। আদালতে গিয়ে মুখ পুড়ছে কেন্দ্রেরই। কিন্তু তাতেও পিঠে কুলো বেঁধেছে দপ্তর, বলছেন আয়কর কর্তারা।