বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের মানুষ
উত্তরবঙ্গের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা পেতে চলেছে। ইতিমধ্যে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জমি হস্তান্তরের কাজ শেষ করেছে রাজ্য সরকার। এখন শুধু আন্তজাতিক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষা। অন্যদিকে এই টার্মিনাল হলে আঞ্চলিক সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ফলে এতে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে বলে আশাবাদী উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ জেলা এবং সিকিম, বিহার সহ প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের একটা অংশের মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে উপর। মূলত শিলিগুড়ি উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হওয়ায় দিনের পর দিন গুরুত্ব বেড়েই চলেছে বাগডোগরা বিমানবন্দরের। এই মুহূর্তে নেপাল-ভুটানে উড়ান থাকলেও অন্য় দেশগুলিতে সরাসরি যাওয়া যায় না। হাতের কাছে বাংলাদেশ যেতে হয় দমদম ঘুরে। ফলে এটি হলে দারুণ ব্যপার হবে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বাগডোগরা বিমানবন্দরের ডোমেস্টিক টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন ৩৬ টি বিমান চলাচল করে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার যাত্রী ওই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে ৷ এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে আসা পর্যটকদের একটা বড় অংশ নির্ভর করে এই বাগডোগরা বিমানবন্দরের ওপর। তবে বিমানবন্দরের সমস্ত গুরুত্ব বিবেচনা করে বাগডোগরা বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করে আন্তর্জাতিক মানের করার প্রস্তাব নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ। কিন্তু এতে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জমি অধিগ্রহণ। শেষমেষ সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে উঠে রাজ্য সরকারের তরফে বাগডোগরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরিত করা হয় জমি।
জানা গিয়েছে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য দরকার ছিল ১০৪ একর জমি। এই জমির মধ্যে ৯৮.৭২ একর জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাকি জমি দেবে প্রতিরক্ষা দপ্তর। তবে ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে ৯৮.৭২ একর জমি হস্তান্তর করে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের দেওয়ার জমির মধ্যে ৯৪.১৭ একর ছিল চা বাগান। এই চা বাগানকে রাজ্য সরকার ১৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ওই জমি অধিগ্রহণ করে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত মালিকানা জমি ছিল আরও ৪ একর। সেই জমিও ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার।
এছাড়াও রাজ্য সরকারের নিজস্ব জমি ছিল ১.০৩ একর। সেই জমিকে এক টাকা সেলামি ও বছরে এক টাকা ভাড়ায় ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় রাজ্য সরকার। জানা গিয়েছে চলতি বছরের ১৬ ই মার্চ একটি চুক্তির মাধ্যমে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জমি হস্তান্তর করেছে রাজ্য সরকার। জানা গিয়েছে চলতি মাসে বাগডোগরা বিমানবন্দরে রানওয়ে মেরামতের জন্য বেশ কয়েকদিন উড়ান পরিষেবা বাতিলের কথা ঘোষণা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই এই কাজ শেষ হলেই নতুন টার্মিনাল তৈরির কাজ শুরু হতে পারে বলে খবর। বাগডোগরা বিমানবন্দরের ডিরেক্টর সুব্রহ্মনি পি বলেন, “ইতিমধ্যেই জমি হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে। এখনও কাজ শুরু হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির কাজ শুরু করা হবে।”
এ বিষয়ে এসজেডিএ চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য জমির প্রয়োজন ছিল। তা হস্তান্তর করা হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, উত্তরবঙ্গের পর্যটন ও শিল্পপতিদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বাগডোগরা বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক টার্মিনালের। কারণ বর্তমানে বাগডোগরা বিমানবন্দরে এই টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর বিমান ওঠানামা করে। ফলে বিমান রাখার হ্যাঙ্গার পর্যাপ্ত না থাকায় সাত সকালে কিংবা রাতে বিমান পরিষেবা পাওয়া যায় না। তাই ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল হলে সেই সমস্যা মিটবে। পাশাপাশি বাগডোগরাকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের সাথে নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এতে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পে একটা জোয়ার আসবে।
অন্যদিকে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল না থাকায় সমস্যায় পড়েছিল এই অঞ্চলের মানুষ। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করার প্রকল্প অনেক আগেই নিলেও রাজ্য সরকার জমি দেয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার জমি দেওয়ায় এখন এই টার্মিনালের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।