হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

ক্ষমতার দাবী

April 4, 2022 | 3 min read

ডঃ বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদার

বিজেপি অবাঙালিদের দল। পশ্চিমবঙ্গে এর কোনো স্থান নেই। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম পড়ে বড় হয়েছে। চিত্তরঞ্জন, সুভাষচন্দ্রের জাত্যাভিমানকে পাথেয় করে এগিয়ে যেতে শিখেছে, তাই অবাঙালি তত্ত্ব এই বাংলার মাটিতে অচল।

সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাঙালির মননে উত্তর-পশ্চিম ভারতের সাম্রাজ্যবাদের কুপ্রভাব কোনদিনই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

বহু রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর বাংলায় তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসই একমাত্র রাজনৈতিক দল যা, বাঙালি নেতৃত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত এবং দশক ধরে বাংলা পরিচালনা করে আসছে দক্ষতার সঙ্গে। বাঙালি জাতির উচিত তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করা। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি রাজ্যই যে যার জাতির স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার বাংলাকেও নিজের ভালোটা বুঝে নিতে হবে। জাতির একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দরকার। মমতা, বাঙালিজাতির নেত্রী। তাঁর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু দাবী নয়।

বাংলা স্বাধীনতার আগে এবং পরে নানাভাবে বঞ্চিত হয়ে এসেছে। সুভাষচন্দ্র বসু বাঙালি ছিলেন বলে, কংগ্রেস পার্টি তাঁকে নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করেছিল। প্রণব মুখোপাধ্যায় বাঙালি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বঞ্চিত হন। বাংলা ভাগের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিকে ভেঙে বাংলার ক্ষমতাকে খর্ব করা। শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঙালি বলেই হত্যা করা হয়েছিল।

এখন অবাঙালি শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়। আবার একই ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু বাঙালি আজ দিল্লিতে ক্ষমতার দাবি রাখে।

আমি মনে করি, পশ্চিমবঙ্গে বাংলা বাধ্যতামূলক করা উচিত অর্থাৎ অবাঙালি জনগোষ্ঠীরও বাংলা শেখা উচিত। আর শুধু বাংলা নয়, বাংলার সকল ভূমিজ ভাষা যথা রাজবংশী, কুর্মালি, লেপচার মতো ভাষাগুলোই এখানকার ভূমিসন্তানদের ভাষা হিসেবে প্রাধান্য পাক। বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের আইএএস এবং আইপিএস প্রবেশের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।

সরকারি ও বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রেই বাঙালি যুবকদের জন্য ৯০% চাকরি সংরক্ষিত করা উচিত। সরকারি দপ্তরে বাঙালি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কোটা (৯০ %) থাকা উচিত। লা-মার্টিনিয়ার এবং সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাঙালি ছাত্রদের জন্য ৮০% শতাংশ কোটা থাকা উচিত এবং এই স্কুলগুলিতে বাংলা প্রথম ভাষা হওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গের মাড়োয়ারি, গুজরাটি, সিন্ধি বাসিন্দাদের বাংলা শেখা শুরু করা উচিত। আইটি সেক্টরে শতভাগ চাকরি বাঙালি তরুণদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। যৌথ প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ আসন বাঙালি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। জাতীয়করণকৃত ব্যাংকের ঋণে বাঙালি ছাত্র ও যুবকদের জন্য ৮০ শতাংশ কোটা থাকতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে জমি শুধুমাত্র বাঙালিদের জন্য সংরক্ষিত হওয়া উচিত।

ব্যবসায়িক লাইসেন্সে বাঙালি ছাত্র ও যুবকদের জন্য নির্দিষ্ট কোটা থাকতে হবে। অবাঙালি জনগণ বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের প্রতি ঈর্ষান্বিত। এমন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আছে যেখানে একজনও বাঙালি ভাড়াটে নেই। এমন আবাসিক এলাকা রয়েছে যেখানে বাঙালি ভাড়াটেদের মাছ বা মাংস রান্না করতে দেওয়া হয় না। কলকাতায় এমন স্কুল আছে যেখানে একজনও বাঙালি ছাত্র নেই। যেখানে বাঙালি শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হয়।

পার্ক স্ট্রিটের এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে বেশিরভাগ দোকান ও ব্যবসার বাঙালি মালিকানা নেই। শুধু কলকাতা নয়, পাশ্ববর্তী
জেলাগুলিতেও একই চিত্র উঠে আসছে। বাঙালি যেন আজ নিজভূমে পরবাসী। এটা চিরকাল চলতে পারে না। বাঙালির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের অবসান হোক।

সুভাষচন্দ্র বসুকে কংগ্রেস পার্টি, অবাঙালি ব্যবসায়ী এবং ব্রিটিশরা ভারত থেকে বহিষ্কার করেছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করার জন্য ব্রিটিশরা বাংলাকে ভাগ করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকে মালবাহী সমতাকরণনীতির দ্বারা ধ্বংস করেছে।

কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে একটিও শিল্প প্রকল্প দেয়নি। বিএইচইএল, এসএআইএল, ইসরো, ডিআরডিও, এইচএএল, ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার সবই পশ্চিম ভারতে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকে যায়। অবহেলিত পশ্চিমবঙ্গ।

এটা আমরা আর সহ্য করব না। এখন বাঙালি তাদের অধিকার দাবি করে। বাঙালি জাতি অবাঙালিদের দ্বারা শোষিত হবে না।বাঙালিদের জন্য বাংলা, জয় বাংলা।

*লেখক বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, নরফল্ক নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়, এন এইচ এস ট্রাস্ট

** (এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ ভাবে লেখকের ব্যক্তিগত। দৃষ্টিভঙ্গি কোনও ভাবেই লেখার দায়ভার বহন করে না।)

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Dr Baidyanath Ghoshdastidar, #Bengali Nationalism

আরো দেখুন