কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

কলকাতার মুকুটে নয়া পালক, মহানগরের গণপরিবহণকে স্বীকৃতি রাষ্ট্রসংঘের

April 6, 2022 | 2 min read

কলকাতার মুকুটে নয়া পালক, এবার রাষ্ট্রসংঘের তরফে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জিতে নিল তিলোত্তমার গণপরিবহণ। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক রিপোর্টে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য, একে একটি “দৃষ্টান্তমূলক সমীক্ষা” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

“ক্লাইমেট চেঞ্জ ২০২২: মিটিগেশন অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ” শীর্ষক ওই রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বেশ কয়েকটি গণপরিবহণ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই গণপরিবহণ মাধ্যমগুলি কলকাতার শহরাঞ্চলে এক দশকের মধ্যে প্রতি এক ইউনিট জিডিপির নিরিখে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমান আরও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২,৯০০-এরও বেশি পৃষ্ঠা বিশিষ্ট এই প্রতিবেদনের পঞ্চম অধ্যায়ে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নয়টি সমীক্ষা অনুসন্ধানের মধ্যে কলকাতার গণপরিবহন মডেল স্থান পেয়েছে। কলকাতা ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, ঘানা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ফিনল্যান্ড এবং উগান্ডার গণপরিবহন মডেল স্থান পেয়েছে।

রাষ্ট্রসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) রিপোর্ট অনুযায়ী,”ভারতের অন্যতম বড় শহর কলকাতা একটি প্রয়োজনীয় সমীক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যেখানে বারোটি বিভিন্ন গণপরিবহণ মাধ্যম রয়েছে, যার প্রতিটির নিজস্ব পরিকাঠামো বিদ্যমান। যার ১.৪ কোটি নাগরিকদের পরিবহণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “কলকাতার সংখ্যাগরিষ্ঠ গণপরিবহণ মাধ্যম হল রিক্সা; যার মাধ্যমে দুজন মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এছাড়াও মেট্রো বা শহরতলির ট্রেনগুলির মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। নানান পরিবহণ মাধ্যমের দ্বারা নিত্যদিন মানুষজন যাতায়াত করে।”

ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, “রাজ্য সরকারও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যাতে সামগ্রিকভাবে পুরো বিষয়টির উন্নতি সাধন করা যায়”।

রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কলকাতার গতিশীলতা ও পরিবহণ ব্যবস্থা আরও দক্ষ হয়ে উঠেছে। গতি, নির্ভরযোগ্যতা এবং ভিড় এড়ানোর ক্ষেত্রে কলকাতার পরিবহণ অন্যতম। উষ্ণ ও আদ্র পরিবেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহন পরিবহণে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।

রিপোর্টে বলা হয়েছে,”ট্যাক্সি এবং অটোরিক্সাগুলো জ্বালানি হিসেবে লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা কলকাতা শহরাঞ্চলে প্রতি ইউনিট জিডিপির ক্ষেত্রে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হার হ্রাস পেয়ে এক দশকের মধ্যে অর্ধেকে পৌঁছেছে।

ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যাপক তথা রিপোর্টের পঞ্চম অধ্যায়ের অন্যতম প্রধান লেখক জয়শ্রী রায় বলেন, “কলকাতার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সরকার সহায়তায় বাসের মাধ্যমে মানুষের পরিবহণ সমস্যার সমাধান হয়েছে।

যদিও আইপিসিসির রিপোর্টেও কলকাতার জন্য কয়েকটি সতর্কটাও জারি করা হয়েছে।

কলকাতার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বসতিতে বাস করে। তাদের মধ্যে মাত্র ৫৯ শতাংশ আধুনিক শক্তি ব্যবহার করে। বাকিরা কেরোসিন, কয়লা এবং কাঠকয়লার মতো কঠিন জ্বালানীর উপর নির্ভর করে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এই স্বীকৃতির প্রশংসা করেছেন, সেই সঙ্গে তারা বলছেন; সাম্প্রতিক অতীতে গণপরিবহণ ক্ষেত্রে পরিমাণ ও বিতরণ দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। রাজ্য সরকারকে শীঘ্রই শহরে সিএনজি প্রচলিত করতে তারা আবেদন করেছেন। কার্বন ফুটপ্রিন্ট আরও কমিয়ে আনার জন্যে ট্রাম ও জলপথকে আরও বেশি করে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘এই স্বীকৃতি এসেছে কতকটা বাধ্যতামূলকভাবেই, অর্থনৈতিক কারণে, আয় কম থাকায় এবং অভাবের কারণে এখানে আরও বেশি লোক গণপরিবহন ব্যবহার করে।”

সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞ অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, “গোটা দেশের মধ্যে কলকাতা ও মুম্বাইতে সর্বাধিক গণপরিবহণ ব্যবহার করা হয়, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গণপরিহণই এই দুই রাজ্যের মানুষ ব্যবহার করে।”
রাষ্ট্রসংঘের ১৯৫টি সদস্য দেশ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর বিগত সোমবার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে।

কলকাতার মহানাগরিক তথা বাংলার পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, এই স্বীকৃতির জন্য আনন্দিত হয়েছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণের উন্নতির জন্য আরও অনেক কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে।

ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই কলকাতায় আরও ৫০টি ইলেকট্রিক বাস আনা হচ্ছে। আমরা আরও ইলেকট্রিক বাসের আবেদন করে, তবে সরবরাহের সমস্যা রয়েছে।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #public transport, #United Nations

আরো দেখুন