আগামী দিনে মানুষ মৃত্যুকেই কামনা করবে, কেন বললেন দার্শনিক নোয়াম চমস্কি?
পরিবেশ দূষণ আর পরমাণু যুদ্ধ। এই দু’টি বিপদ শীঘ্রই শেষ করে দিতে পারে মানব সভ্যতাকে। ব্রিটেনের ‘নিউ স্টেটসম্যান’ পত্রিকাকে সাক্ষাৎকারে এমনই বলেছেন বিশিষ্ট লেখক, ভাষাতাত্ত্বিক ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি (Noam Chomsky)। তাঁর মতে, মানুষের ইতিহাস ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক বাঁকের’ মুখে পড়তে চলেছে।
নোয়াম চমস্কির (Noam Chomsky) কথায়, “পরিবেশের বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা আমূল বদলে যাবে। আমি সুদূর ভবিষ্যতের কথা বলছি না। পরিবেশের ক্ষতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে, যেখানে থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব নয়। আমি বলছি না যে, শীঘ্রই সবাই মারা যাবে। কিন্তু আগামী দিনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যখন মানুষ মৃত্যুকেই কামনা করবে। যারা দ্রুত মারা যাবে, তাদের সবাই ভাববে ভাগ্যবান।”
ইউক্রেনের যুদ্ধকে ‘রাক্ষুসে কাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াম চমস্কি (Noam Chomsky)। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিন্দা করে দার্শনিক বলেন, “তিনি কেন এই কাজ করলেন?” নোয়াম চমস্কির মতে, প্রশ্নটির দু’রকম উত্তর হতে পারে। পশ্চিমী দুনিয়ায় মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, পুতিনের আগ্রাসী মনোভাবের জন্যই যুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু দার্শনিক (Noam Chomsky) ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই যুদ্ধকে দেখতে চান।
তাঁর কথায়, “আমেরিকার কার্যকলাপও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, তারা ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক সমঝোতা আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমেরিকা থেকে ইউক্রেনে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটের সদস্য করার সব ব্যবস্থাই পাকা করে ফেলা হয়।”
দার্শনিকের মতে, আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করা উচিত। না হলে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হওয়া বিচিত্র নয়। নোয়াম চমস্কি বলেন, “নৈতিক কারণে পুতিনের ওপরে আমাদের রাগ হতেই পারে। কিন্তু আমেরিকাও নানা জায়গায় ভয়ংকর কাণ্ড ঘটিয়েছে।” আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদেশের মানুষ এখন খেতে পাচ্ছে না। এর জন্য আমেরিকাই দায়ী। নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে আফগানিস্তানের বিপুল পরিমাণ অর্থ আছে। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি সেই অর্থ কাউকে দিতে অস্বীকার করেছে।
নোয়াম চমস্কির মতে, আমেরিকায় ফের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি হিটলারের তুলনা করেছেন। তাঁর কথায়, “হিটলারের রেডিও ভাষণের কথা আমার মনে আছে। আমি ওই ভাষণ বুঝতাম না। আমার বয়স তখন ছিল ছয়। কিন্তু হিটলারের ভাষণ শুনে তাঁর আগ্রাসী মনোভাব বুঝতে অসুবিধা হত না। এখন ট্রাম্পের সভা দেখে আমার সেই ভাষণের কথা মনে পড়ে।”
নতুন প্রজন্মের ওপরে আস্থা রেখেছেন নোয়াম চমস্কি। তাঁর বিশ্বাস, তরুণ-তরুণীরা একদিন এই ‘পাগলামি’ থামাতে পারবে।