দেশ বিভাগে ফিরে যান

হিজাব থেকে হালাল – নাগরিক ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতে ধর্মই ঢাল বিজেপির!

April 8, 2022 | 3 min read

এই প্রতিবেদনটি লিখেছেন বীর সঙ্ঘভি। দ্য প্রিন্ট ওয়েব পোর্টালে এই লেখাটি ইংরেজি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

হিন্দু, মুসলমান, হালাল, আমিষ – আদৌ কি এই শব্দগুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে? তবুও বারবার মোদীর আমলে উঠে আসে ধর্মের কথা। কে কী খাবেন, কী পরবেন এ সব নিয়েই চিন্তিত রাষ্ট্রযন্ত্রের চালিকা শক্তি! মানুষ জীবনযাত্রাতেও উঁকি মারে বিজেপি। কেউ যদি নবরাত্রির সময় মটন বিরিয়ানি খান, তাহলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে? কোনও পণ্যকে যদি হালালের তকমা দেওয়া হয়, তাতে কি তার গুণগত মান পাল্টে যায়? কোনও ছাত্রী যদি একটি মাথা ঢেকে স্কুলে আসে, তাতে কি পঠনপাঠন প্রভাবিত হতে পারে?

এই ইস্যুগুলো কি আদৌ একজন সাধারণ মানুষের জীবনে ফারাক আনে? আপনার উত্তর নিশ্চয়ই নেতিবাচকই হবে। কেউ কাউকে মাটন বিরিয়ানি বা আমিষ খেতে বাধ্য করে না। হালাল খায় না মাথায় দেয়, আদপে অনেকেই তা বুঝতেও পারেন না। কোনও মেয়ে যদি স্কুলে যাওয়ার সময় হেডস্কার্ফ পরে, বা কোনও শিখ ছাত্র যদি পাগড়ি পরে, কিছু কি পাল্টে যায়?

দিল্লিতে মাংসের দোকান বন্ধের নির্দেশ ঘিরে ক্ষোভ
নবরাত্রিতে মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নিদান পুরসভার (ছবি : নিউজরুম পোস্ট)

তবুও আজকের ভারত যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তারাই এগুলোকে ইস্যু করে তোলেন। সাধারণত একই ধাঁচে এমনটা করা হয়। মূলত ক্ষুদ্র পরিসরের কোনও প্রান্তিক নেতা, যাকে আগে কখনই কেউ কোনও কর্মসূচিতে দেখেননি, প্রচারের আলোতে বা সংবাদ শিরোনামে আসার জন্য বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক জঘন্য মন্তব্য করেন। একটি হিন্দু উৎসবের সময় একটি মাংসের দোকান খোলা উচিত কিনা, কিংবা ছাত্রীদের মাথা ঢাকা উচিত কিনা অথবা হালাল পণ্য আদৌ কেনা উচিত কিনা – এমন সব অবান্তর ইস্যুর মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।

প্রথমে প্রান্তিক কোনও ব্যক্তি এইরকম বিদ্বেষমূলক দাবি করেন। তারপরেl, এই দাবিগুলি বারবার উপস্থাপিত করা হয়ে, বারংবার মিথ্যের পুনরাবৃত্তি করে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর ফেসবুক টুইটারে বিতর্ক শুরু হয়। অবশেষে নিউজ রুমের থেকে তা সাধারণ জনমানসে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই দুদে রাজনীতিবিদেরা মাঠে নামেন। স্কুলগুলোতে হেডস্কার্ফ নিষিদ্ধ করা হয়। বলপূর্বক মাংসের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আদপে এগুলি আসল নাগরিক সমস্যাকে আড়াল করার জন্য করা হয়। মানুষকে বলা বানানোর জন্যই এই ইস্যু উত্থাপন করা হয়।

Hardline Hindu Youth Call the Shots on Streets of Northern India
নাগরিক সমস্যা থেকে মানুষের নজর সরাতেই ধর্মের ঢাল ব্যবহার বিজেপির (ছবি- রয়টার্স)

স্কুল ইউনিফর্মের অংশ হিসাবে একটি হেডস্কার্ফের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়? কেন হবে এমনটা। হালালের ক্ষেত্রেও তাই। মাংস কাটার বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে একটি উপায় হল হালাল। একটি কাবাবে কামড় দেওয়ার সময় কি আমরা কখনও ভাবি সেটি কিভাবে কাটা হয়েছে? রাজনীতিবিদরা চান সাধারণ মানুষ এই বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক করতে থাকুক। তাহলেই আর মুদ্রাস্ফীতির হার, পেট্রল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষ ভাববে না। জরুরি সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই এমনটা করা হচ্ছে।

Video: Protests over hijab row intensify in India - CNN Video
হিজাব নিয়ে বিতর্কের জেরে ভারতের পড়ুয়াদের আন্দোলন, (ছবি- পিটিআই)

ভারতকে এখন হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে বিজেপি সরকার। মুসলিমরা জানেন যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সমান নাগরিক হিসেবে তাদের অবস্থান এখন আক্রমণের মুখে রয়েছে। এই সব বিতর্কের লক্ষ্য একেবারেই মুসলমানেরা নন, বরং হিন্দুরা। বিজেপি সফল হয়েছে কারণ, তারা হিন্দু ধর্মকে ভোট জেতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সবকিছুকে হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে পরিণত করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়াই আসল লক্ষ্য, হিন্দুদের মনে ভীতির সঞ্চার করে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করাই বিজেপির লক্ষ্য। ক্ষমতায় থাকতে এটাই তারা করে যাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Hindus, #vir sanghvi, #halal, #meat ban, #Modi, #bjp, #Hijab row

আরো দেখুন