সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়লেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, জানেন কীভাবে?
২০২২ সালে দাঁড়িয়েও আজও আমরা মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে গিয়ে রাজনীতি বা ধর্মগুরুদের একাধিকবার অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণাসূচক বাক্য ব্যবহার করতে শুনি।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে লখনউয়ে অন্য ধর্মের মহিলাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন গেরুয়া বসন পরা এক ব্যক্তি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যে ব্যক্তিকে এই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য করতে শোনা গেছে তিনি আর কেউ নন খৈরাবাদের স্থানীয় মহন্ত বজরং মুনি। তবে ভারতের মাটিতে যে ঘৃণার কোনও স্থান নেই তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন মুর্শিদাবাদের ইচ্ছাগঞ্জের বাসিন্দা দেবপ্রিয় মজুমদার। গ্র্যাজুয়েশন করার পর বর্তমানে ডিএলএড করছেন দেবপ্রিয়।
২০২০ সাল নাগাদ দেবপ্রিয়র মা, দেবীরানি মজুমদার বক্ষের কর্কট রোগে আক্রান্ত হন। সেই সময় দেবপ্রিয় মাকে চিকিৎসা করাতে মুম্বইতে টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে যান। দীর্ঘ চিকিৎসার পর বর্তমানে দেবীরানি প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নিজের মায়ের সুস্থ হওয়ার গল্প শোনাতে গিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘২০২০ সাল নাগাদ আমার মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হয় মুম্বাইতে। কিন্তু সেখানে আমরা কাউকেই চিনতাম না। মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রচুর রক্তের দরকার হত। আমরা ধর্মবিশ্বাসী হিন্দু হলেও আমার মাকে সেই সময় মুম্বইয়ের প্রচুর মুসলিম ভাই এসে রক্তদান করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউই আমাদের চিনতেন না। মুসলিম ভাইদের দেওয়া রক্তেই আজ আমার মা প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’
রক্তঋণ শোধ না করা গেলেও মুসলিম ভাইদের এই দানের কথা কোনওদিনও ভুলবেন না দেবপ্রিয়। তাই রমজান মাসে মুসলিম ভাইদের জন্য এবছর ইফতারের আয়োজন করেছেন দেবপ্রিয়। শুক্রবার সন্ধেয় মুর্শিদাবাদ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে এবং এলাকার একাধিক মসজিদ ঘুরে ঘুরে তিনি মুসলিম পরিবার এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ইফতারের সামগ্রী বিতরণ করলেন।
দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমার ইচ্ছা রয়েছে রমজান মাসে আরও একদিন আমার মুসলিম ভাই-বোনদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করার। আমি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও পার্থক্য বুঝিনা। আমার প্রচুর বন্ধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাই যে সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার মাকে বাঁচিয়েছেন তাঁদের উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য আমার এই প্রচেষ্টা। দিন আনি দিন খাই এমন অনেক পরিবাররের লোকেদের কাছে রমজান মাসে সারা দিন উপোস করে থেকে কাজ করা খুব কষ্টকর। সন্ধেবেলায় ইফতারের সামগ্রী জোগাড় করতে এমন কিছু পরিবার যাতে কষ্টের মধ্যে পড়েন তাই তাঁদের একদিন ভাল রাখার দায়িত্ব আমি নিয়েছি।’ দেবপ্রিয়র এই মানবিক উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সমগ্র জেলাবাসী।