সুদ দিতে ব্যর্থ, পিএফ তহবিলের টাকা আরও বেশি করে শেয়ার বাজারে খাটানোর পরিকল্পনা কেন্দ্রের
২০২০-২১ অর্থবর্ষের সুদ মিলেছে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রায় ১০ মাস পর। আর দীর্ঘ টালবাহানা শেষে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের সুদের হার ঘোষণা হয়েছে মার্চের মাঝামাঝি। তাও ৮.১ শতাংশ, যা বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে পিএফ নিয়ে ক্ষোভ তো বাড়ছেই, অনেক ক্ষেত্রেই তিতিবিরক্ত গ্রাহকরা। যেখানে লাফিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমশ লাগামছাড়া হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি, সেখানে সুদের হারে টান কেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। এই ক্ষোভ সামাল দিতে পিএফ তহবিল আরও বেশি করে শেয়ার বাজারে খাটানোর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন দপ্তরের এক অন্যতম শীর্ষ কর্তা। নিজেদের ‘ব্যর্থতা’ ঢাকতে সাধারণ মানুষের লগ্নির টাকা নিয়ে এইভাবে কেন ফাটকা খেলার পথে এগচ্ছে কেন্দ্র, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সাধারণ কর্মচারীর বেতন থেকে যে টাকা কেটে নেওয়া হয় এবং যে অঙ্ক কর্মচারীর হয়ে জমা করে কর্মদাতা সংস্থা, সেই টাকা পিএফ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন খাতে লগ্নি করে। যেহেতু এই বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের একটি বড় অংশের মানুষের সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত, তাই লগ্নির ব্যপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করাই রীতি। কোথায় কত টাকা লগ্নি হবে, তা ঠিক হয় ট্রাস্টি বোর্ডে। এখনকার নিয়ম অনুযায়ী, মোট টাকার অন্তত ৪৫ শতাংশ লগ্নি করতে হয় সরকারি খাতে বা গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজে। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নি করা যায় এখানে। বিভিন্ন ঋণপত্র বা ডেট সিকিউরিটিজ এবং ব্যাঙ্কের বিভিন্ন স্থায়ী আমানতে লগ্নি করা যায় অন্তত ৩৫ শতাংশ টাকা। তা বাড়ানো যায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। মানি মার্কেটে লগ্নি করা যায় সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট, রিয়েল এস্টেট ইউনিট বা যে কোনও ‘অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজ’-এ লগ্নির হারও সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ। ইক্যুইটি বা ইক্যুইটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনও ফান্ডে জমা করা হয় ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ, সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। এটাই শেয়ার বাজারে লগ্নি। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ, ইনডেক্স ফান্ডে লগ্নিও এরই আওতায় পড়ে। শেয়ার বাজারে লগ্নির সুযোগ পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও, ১৫ শতাংশ লগ্নিই করা হয় এখানে।
ইপিএফও সূত্রে খবর, ১৫ শতাংশের এই সর্বোচ্চ হার বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা হতে পারে পরবর্তী ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠকে। জুন মাসে তা হওয়ার কথা। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে দপ্তরের সাফাই, পিএফে সুদের হার যাতে বৃদ্ধি করা যায়, তাই এই পরিকল্পনা। আলোচনাসভায় দপ্তরের অন্যতম এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘পিএফে সুদের হার কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে। কীভাবে হার বা রিটার্ন যাতে বাড়ানো যায়, সেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তার জন্য শেয়ারে লগ্নির হার বৃদ্ধির প্রস্তাবও আসতে চলেছে।’ যেহেতু এটি বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরই চূড়ান্ত হবে, তাই সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই আধিকারিক।
পিএফের টাকা সাধারণ কর্মচারীকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা দেয়। সেই টাকার বড় অংশ যদি শেয়ার বাজারে খাটে, তাহলে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হবে না তো? এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বাজারের চলতি সুদের থেকে বেশি লাভ হয়তো সাময়িকভাবে শেয়ার বাজার দেয়, কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে কি না, এড়ানো যাচ্ছে না সেই আশঙ্কাও। পাশাপাশি, পিএফ গ্রাহকদের প্রশ্ন, সরকার কি বেশি রিটার্নের টাকার ভাগ আদৌ গ্রাহকদের দেবে? তার কারণ, যাঁরা পিএফ থেকে পেনশন পান, তাঁরা জানেন, সরকার কীভাবে তাঁদের বঞ্চনা করছে। আর ইতিমধ্যে মোদি সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, ন্যূনতম পেনশন বাড়ানো হবে না। তাই শেয়ারে লগ্নির ব্যাপারেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেকেই।