গুলাম নবি আজাদকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন মোদী?
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (Former Central Minister), বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদকে (Ghulam Nabi Azad) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করতে পারে এনডিএ (NDA) শিবির, জল্পনা তীব্র রাজধানী দিল্লিতে (Delhi)৷ কেন্দ্রের শাসক শিবির এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে, সমস্যায় পড়তে পারে কংগ্রেস-সহ গোটা বিরোধী শিবির৷ প্রকাশ্যে তাদেরই দলের বর্ষীয়ান নেতা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের (Ghulam Nabi Azad) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করা সমস্যার জেনেই গভীর সমস্যায় পড়তে পারে শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেস (Congress)৷
অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে গুলাম নবির ব্যক্তিগত সম্পর্ক এতটাই ভালো যে, তাদের পক্ষেও সনিয়া (Sania Gandhi)-রাহুলের (Rahul Gandhi) নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সওয়াল করা জি২৩ গোষ্ঠীভুক্ত এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা কার্যত অসম্ভব৷ বিরোধী ঐক্য শূন্য করা এবং গুলাম নবির প্রতি কংগ্রেসের অসূয়াকে পরোক্ষে জনসমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনা মাথায় রেখেই এনডিএ শিবিরের তরফে কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার ভাবনা চিন্তা চলছে, নয়াদিল্লিতে দাবি রাজনৈতিক সূত্রের৷ তাঁদের সংযোজন, গুলাম নবি আজাদকে রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে প্রার্থী করা হলে, তার পিছনে কাজ করতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) সঙ্গে গুলাম নবি আজাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়নও৷ রাজ্যসভা সাংসদ হিসেবে গুলাম নবির অবসরের সময়ে তাঁকে সম্মান জানাতে গিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Prime Minister Narendra Modi)৷
এমন একটা সময়ে আজাদকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার জল্পনা ছড়িয়েছে রাজধানীতে, ঠিক যে সময়ে বিরোধী শিবিরের মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে প্রবল মতানৈক্য রয়েছে৷ অঙ্কের হিসেবে বিজেপি এবং তার সহযোগী দলগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন, ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিকে (BJP) চ্যালেঞ্জ ছোড়ার জন্যই প্রয়োজন বিরোধী শিবিরের সর্বসম্মত প্রার্থীকে দাঁড় করানো, এমনই অভিমত বিরোধী শিবিরের অনেক সদস্যের৷ তারপরেও মতানৈক্যের জেরে এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিরোধী শিবির, দাবি করা হয়েছে রাজনৈতিক সূত্রে৷ তাঁদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে এনডিএ শিবিরের ভাবনা চিন্তা৷ এর আভাস মিলেছে শুক্রবার, যখন নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের সম্ভাব্য প্রার্থী কে হবেন সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)৷ সপ্তাহ তিনেক আগে দিল্লিতে এসে একই অবস্থান নিয়েছিলেন বিজেডি সুপ্রিমো, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক৷
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটাভুটিতে অংশ নেন দেশের লোকসভা, রাজ্যসভার সাংসদ এবং সব রাজ্যের বিধায়করা৷ এই হিসেবে দেশের ৭৭৬ জন সাংসদ এবং ৪১২০ জন বিধায়কের ভোটেই দেশের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন হওয়ার কথা৷ এখানে জনপ্রতিনিধিদের প্রদত্ত মোট ভোটের পিছনে একটি অঙ্ক আছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে মোট ভোট সংখ্যা নির্ধারিত হয়৷ এই হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের পরিমাণ হল ১০,৯৮,৯০৩৷ এর অর্ধেকের বেশি অর্থাত্ ৫,৪৯,৪৫২টি ভোট পেলেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত৷ এই হিসেবে দেশের অধিকাংশ রাজ্যে এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় থাকা বিজেপি এবং তার সহযোগী দলগুলির প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত৷
এটা জানার পরেও বিরোধী শিবিরের একটা বড় অংশ মনে করছে, প্রতীকি বিরোধিতার জন্যই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নিজেদের একতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা উচিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে৷ এই মতই ফুটে উঠেছে বিরোধী শিবিরের প্রথম সারির এক সাংসদের কথায়৷ সেই সাংসদ বলেন, ”রাজনীতিতে ফুলস্টপ বলে কিছু হয় না৷ হার জিত লেগেই থাকে৷ সেই সব বিষয় মাথায় রাখার পাশাপাশি নির্দিষ্ট লক্ষ্যোর দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলাই প্রকৃত রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে৷” তাঁর দাবি, ”এই আবহে বিরোধী শিবিরের বড় দলগুলির অবিলম্বে একজোট হয়ে রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করা প্রয়োজন, তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানানো আরও বেশি কষ্টকর হয়ে উঠবে৷”