আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে! কীভাবে পালন করা হয় নীল পুজোর ব্রত, জানেন?
নীল পুজো পালন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন। সন্তানের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনায় এদিন বাংলার ঘরে ঘরে মায়েরা উপবাস রেখে নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করেন। সারাদিন কোনও খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না তাঁরা। সারাদিন উপোস রেখে সন্ধেয় মহাদেবের পুজো করে, তাঁর প্রসাদ খেয়ে তবে উপবাস ভঙ্গ করেন। এই বছর ১৩ এপ্রিল বুধবার পালিত হচ্ছে নীল ষষ্ঠীর ব্রত।
এই সময় মাটি দিয়ে শোয়ানো অবস্থায় একটি দেব মূর্তি তৈরী করা হয়। যে মূর্তিকে শিবের মূর্তি বলা হয়। এটি অনেকটাই অমসৃণ থাকে। ঠিক শিবের আদল বোঝা যায় না। নরম মাটি দিয়ে তৈরী এই মূর্তির গায়ে খেজুর দিয়ে আবরণ দেওয়া হয়। চারি পাশে খেজুর পাতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। কোথাও কোথাও মাটির মূর্তির বদলে একটি মাটির ঢিবি তৈরি করা হয়। এর পর ফুল-বেল পাতা দিয়ে শুরু হয় নীল পুজো। একই সঙ্গে চলে বালা গান।
এই দিন বাড়ির মহিলারা সারাদিন ধরে উপোস করে থাকেন। বিকেলে পুজো দিয়ে তবেই কিছু মুখে দেন তাঁরা। সাধারণত পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনার্থে নীলের উপবাস করে থাকেন।
নীল ষষ্ঠীর কথা
এক বামুন আর বামনীর পাঁচ ছেলে আর দুটি মেয়ে ছিল। তারা খুব পুজোআচ্চা করত। কিন্তু এত পুজো, বারব্রত করেও তাঁদের সব ছেলেমেয়েগুলো একে একে মরে গেল। তখন বামনীর ঠাকুরদেবতায় বিশ্বাস চলে গেল। তাঁদের আর সেই জায়গায় থাকতেও ভালো লাগল না। বামুন-বামনী ঠিক করলেন সব ছেড়েছুড়ে তাঁরা মনের দুঃখে কাশীবাসী হবেন। দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করে অন্নপূর্ণার পুজো করে মণিকর্ণিকার ঘাটে বসে আছে, এমন সময় মা-ষষ্ঠী এক বুড়ি বামনীর বেশে এসে বললেন ” কি ভাবছ গো মা?”
বামনী বললেন “আমার সব ছেলেমেয়েদের হারিয়েছি। এত পুজোআচ্চা সব বিফলে গেল আমাদের। সব অদৃষ্ট। ঠাকুর দেবতা বলে কিছ্ছু নেই।” ষষ্ঠীবুড়ি বললেন “বারব্রত নিষ্ফল হয়না মা, ধর্মকর্ম যাই কর ঈশ্বরে বিশ্বাস চাই। তুমি মা-ষষ্ঠীকে মানো? তাঁর পুজো করেছ কখনো? তিনি সন্তানদের পালন করেন। বামনী বললে “আমি এতদিন ধরে সব ষষ্ঠী করে আসছি কিন্তু তবুও আমার ছেলেরা রইল না।
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন, “তুমি নীলষষ্ঠীর পুজো করেছ কখনো? চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে শিবের পুজো করবে। শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে জল খাবে। সন্তানদের মঙ্গলকামনা করবে” বামনী সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পুনরায় মাতৃত্ব লাভ করলেন।
নীলষষ্ঠীতে মূলত সন্তানের কামনায় উপবাস করে থাকেন মহিলারা। তবে শুধু বিবাহিত মহিলা নয়, অবিবাহিত মহিলা এবং অনেক পুরুষও এই ব্রত পালন করেন নিষ্ঠা করে। তারকেশ্বর থেকে শুরু করে পশ্চিম বাংলার একাধিক স্থানে কাঁধে বাঁক নিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালতে হাজির হন শিব ভক্তেরা।