রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

সরকারের মানবিক রূপ, বিরল রোগে আক্রান্ত পাঁচ শিশুর চিকিৎসার খরচ বহন করছে রাজ্য

April 14, 2022 | 2 min read

খাও না খাও। প্রতি বছর দিতে হবে ১ কোটি টাকা। বিলাসবহুল প্রমোদতরী কিংবা সমুদ্রঘেঁষা কোনও অট্টালিকার ভাড়া নয়। চিকিৎসার খরচ। বয়স পাঁচ থেকে পনেরোর মধ্যে এমন পাঁচ শিশুর চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকারের কাঁধে। এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) একেক জনের খরচ জোগাচ্ছে রাজ্য সরকার।

কোন অসুখে এমন আকাশছোঁয়া খরচ? এসএসকেএম হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক ডা. রুচিরেন্দু সরকার জানিয়েছেন, বিরল এক জিনঘটিত অসুখে আক্রান্ত ওই পাঁচজন। অত্যন্ত জটিল সেই ব্যারাম স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফিতে পেশি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। চলে গিয়েছে নড়াচড়ার ক্ষমতা। কতটা বিরল এই অসুখ? কেন্দ্রীয় সরকারের রেয়ার ডিজিজ পলিসি অনুযায়ী ১০ লক্ষে মাত্র পনেরো-কুড়িজনের মধ্যে দেখা গেলে তবেই সে অসুখকে বিরলতমর তালিকায় ফেলা যায়। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার পীযূষ রায়ের কথায়, সেই মানদণ্ডে গুরুতর অসুখ এই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি।

অসুখগুলি জিনঘটিত হওয়ায় জ্বর, ম্যালেরিয়ার মতো কয়েকদিন ওষুধ খেলে সেরে যায় না। রোগী যে ক’দিন বেঁচে থাকে তাঁকে ওষুধ খেয়েই কাটাতে হয়। চিকিৎসা মূলত দু’প্রকার। ওষুধ খেয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিশ্চিতভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় কিউরেটিভ ট্রিটমেন্ট। কিন্তু রোগীকে সুস্থ রাখতে সারাজীবন ওষুধ খেয়ে যাওয়ার চিকিৎসা পদ্ধতির নাম সাপোর্টিভ থেরাপি। দ্বিতীয় এই চিকিৎসাই চলছে ওই পাঁচজনের। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এনজাইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা ইআরটি দিতে হচ্ছে ওই পাঁচজনকে। শরীরের নানা এনজাইম তৈরি হচ্ছে না এদের। বাইরে থেকে এই এনজাইম দেওয়ার খরচ বিপুল। তার খরচ চালানো মধ্যবিত্তর পক্ষে হাতি পোষার শামিল।

বিরল অসুখ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় বিরল অসুখে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটা পলিসি তৈরি করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করেছে সেই রেয়ার ডিজিজ পলিসি। সেই পলিসি অনুযায়ী কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি হয়েছে একটি সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটি। এছাড়াও রয়েছে আটটি রিজিওনাল সিওই বা সেন্টার অফ এক্সেলেন্স। তার মধ্যেই একটি কলকাতার এসএসকেএম। ওই হাসপাতালের ইস্টার্ন রিজিয়নের অন্যতম উৎকর্ষ কেন্দ্র হওয়ায় পড়শি ওড়িশা, বিহার, অসম থেকে বিরল অসুখের রোগী আসছেন এখানে। নিজের রাজ্যের তো বটেই পড়শি রাজ্যের খরচও জোগাতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (CM Mamata Banerjee)।

ডা. রুচিরেন্দু সরকারের কথায়, আচমকাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেউ। আদৌ তার বিরল অসুখ হয়েছে কি না তা জানার জন্য জিনের গঠন পরীক্ষা করতে হয়। বেসরকারিতে সেই পরীক্ষার খরচ বিপুল। এই মুহূর্তে তা করিয়ে আনা হয় অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স বা ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট সায়েন্স এডুকেশন অফ রিসার্চ থেকে। রোগীদের কথা ভেবে এসএসকেএম হাসপাতালেই তৈরি হচ্ছে জিন পরীক্ষার ল্যাবরেটরি। তা তৈরি করতে যে টাকা দেওয়ার কথা তার সিকিভাগ মাত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে সমস্ত চাপ এসে পড়েছে রাজ্য সরকারের কাঁধে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বিরল অসুখে আক্রান্ত শিশুদের কোনও দায় নিচ্ছে না কেন্দ্র। এই শিশুদের চিকিৎসার খরচ বিপুল। ফি বছর প্রতি রোগীর জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ। ন্যাশনাল রেয়ার ডিজিজ পলিসি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ সাহায্য করার। কিন্তু কেন্দ্রীয় অনুদান অত্যন্ত অনিয়মিত। স্বাস্থ্য অধিকর্তা নিজে তিনবার কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখেছেন। তাতেও কাজ হয়নি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সীমিত ক্ষমতার মধ্য দিয়েই এদের চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রেয়ার ডিজিজ পলিসিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, সরকারের পক্ষে এহেন বিরল অসুখে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। সেক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের। কিন্তু করোনা আবহের পর তার অবস্থাও অত্যন্ত সঙ্গীন। টাকা উঠছে নামমাত্র। ফলে রাজ্য সরকারের ঘাড়েই এসে পড়েছে চাপ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#west bengal government, #treatment, #children

আরো দেখুন