এবার থেকে যামিনী রায়ের সৃষ্টিকে অনুভূতির চোখে দেখবেন দৃষ্টিহীনেরা
পৃথিবীর রঙ-রূপ তাদের অজানা। আলো নিভে গিয়েছে যাদের জীবন থেকে, তাদের জন্য এক অভিনব উদ্যোগ নিয়ে ভারতীয় জাদুঘর। অন্ধজনে দেহ আলো, এবার থেকে যামিনী রায়ে সৃষ্টিকে অনুভূতির চোখে দেখবেন দৃষ্টিহীনেরা। ভারত তথা বাংলার প্রবাদপ্রতিম চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের সৃষ্টির কেবল বর্ণনাই এতদিন শুনে এসেছিলেন তারা। এবার তা অনুভব করবেন দৃষ্টিহীনেরা। যে তিন রমণীর টানা চোখে বিবরণ এতকাল তারা শুনে এসেছেন, এবার তা ছুঁয়ে দেখবেন তারা।
যামিনী রায়ের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সম্প্রতি ভারতীয় জাদুঘরের চিত্রশিল্প প্রদর্শনীশালায় শিল্পীর চারটি ছবির ত্রিমাত্রিক ইনস্টলেশন বসানো হয়েছে। শিল্পীর আঁকা বাউল ছবিরও ইনস্টলেশন তৈরি করা হচ্ছে, এটিও ছুঁয়ে দেখতে পারবেন দৃষ্টিহীনেরা। প্রসঙ্গত, এর আগে অবন ঠাকুরের পদ্মপত্রে অশ্রুবান এবং বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের শিমুল গাছ-এর ত্রিমাত্রিক ইনস্টলেশন তৈরি করা হয়েছে। পাশেই রাখা থাকছে ব্রেলে মাধ্যমে লেখা শিল্পের বিস্তারিত বর্ণনা।
জাদুঘরের কলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অর্ণব বসু বলেন, “কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ এলে আমরা তাঁর কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। ইনস্টলেশন ছুঁয়ে দেখার সময় তাঁদের শিল্পকর্মটি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলে দেওয়া হয়।”
নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “ছুঁয়ে দেখতে না পেলে দৃষ্টিহীনদের জাদুঘরে গিয়ে লাভ নেই। এটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এতে দৃষ্টিহীনেরা আঁকার প্রতি আগ্রহী হবেন। দৃষ্টিহীন ভাস্করেরাও সমৃদ্ধ হবেন।”
অর্ণব বাবু জানান, বিশ্বজিৎবাবুর পরামর্শ মেনেই ইনস্টলেশনগুলো তৈরি করা হয়েছে। পরে প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু ছবি, কালীঘাটের পটের ত্রিমাত্রিক ইনস্টলেশনও তৈরি করা হবে বলে জানা গিয়েছে। জাদুঘরের অধিকর্তা অরিজিৎ দত্তচৌধুরী বলেন, “বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা জাদুঘরে এই বিপুল সম্পদ থেকে যেন বঞ্চিত না হন, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।”