বন্ধ কারখানার জমিতে বিনিয়োগ বাড়াতে সেলামির হার কমাচ্ছে রাজ্য
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আগে বহুদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা কল-কারখানার জমিতে শিল্প গড়তে কোনও চেষ্টাই বাদ দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। এবার শিল্পের জন্য এই জমি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে এককালীন সেলামির হার আরও কমানোর পথে হাঁটছে রাজ্য। সেলামির হার গড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেলামির হার কমালে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। তাছাড়া রাজ্যের অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নবান্ন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে এই নিয়ে প্রথম দু’টি পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এরপর মন্ত্রিগোষ্ঠীর ছাড়পত্র পেলে নতুন হারে সেলামি নেওয়ার পথে হাঁটবে রাজ্য। বাণিজ্য সম্মেলনের দু’দিন আগে অর্থাৎ আগামী ১৮ এপ্রিল পরবর্তী মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আগামী বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এই বিষয়টিকে তুলে ধরার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯৫৫-৫৬ সালে ল্যান্ড সিলিংয়ের নিয়ম মেনে বহু জমি ‘খাস’ বলে চিহ্নিত হওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ আইন ১৯৫৩-র ৬(৩) ধারা অনুযায়ী ছাড় দেওয়া হয় মিল, ফ্যাক্টরি বা ওয়ার্কশপকে। কলকারখানাগুলি যাতে চলতে পারে, সে কারণে তৎকালীন মালিকদেরই সেই জমি রাখতে দেওয়া হয়েছিল। বন্ধ কারখানাগুলির জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজে দিতে ল্যান্ড রিফর্ম রুলসে সংশোধনী আনা হয় ২০১৭ সালে। তিন বছর পরে অর্থাৎ ২০২০ সালে প্রথমবার সেলামির হার কমানো হয়। সেই অনুযায়ী এখন যাঁর অধীনে জমি রয়েছে, তিনি যদি পুরনো কারখানা চালু করতে চান, তাহলে তাঁকে মাত্র এক টাকা সেলামি এবং মোট জমির দামের ০.৩ শতাংশ বাৎসরিক ভাড়া হিসেবে দিতে হবে। পুরনো কারখানার জায়গায় অন্য কোনও শিল্প করতে চাইলে, তার জন্যও সেলামির হার ও ভাড়া বেঁধে দেওয়া হয়। বার্ষিক ভাড়ার হার এক হলেও, এক একটি শিল্পের জন্য এক এক রকমের সেলামির হার নির্ধারিত করা হয়। আবার যাঁর অধীনে জমি আছে, তাঁর জন্য সেলামির হার কম। তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন কোনও ব্যক্তি ওই জমির লিজ নিতে গেলে তাঁকে অন্য ঘরে সেলামি দেওয়ার কথা বলা হয়। যদি কেউ বন্ধ কারখানার জমিতে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ ভিত্তিক শিল্প বা
পোল্ট্রি করতে চান, তাহলে তাঁকে জমির বর্তমান মূল্যের ১০ শতাংশ হারে এককালীন সেলামি দিতে হয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, লজিস্টিক হাব, ফাইন্যান্স হাব, ফুড পার্ক, তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের মতো শিল্প গড়ে তুলতে চাইলে সেলামির হার হল ১৭ শতাংশ। ফিল্ম সিটি বা পর্যটন শিল্পের জন্য ২৫ শতাংশ। সমস্ত ক্ষেত্রেই নবান্ন এবার সেলামির হার ৫ থেকে ৭ শতাংশ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিলমোহর দেবেন রাজ্যের প্রশাসনের শীর্ষনেতৃত্ব।